গল্প - ভালো থেকো তুমি,পরজন্মে আবার দেখা হবে।

ভালো থেকো তুমি, পরজন্মে আবার দেখা হবে


তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকে তোমার প্রেমে পরে যাই. কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না. যদি তোমার অন্য কারো সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে কিংবা যদি বারণ করে দাও, তাই। যাই হোক, একদিন সাহস করে তোমার সামনে গিয়ে বলে ফেলি যে, আমি তোমাকে যে দিন প্রথম দেখেছি সেদিন থেকে তোমার প্রেমে পরে গেছি. তোমাকে খুব ভালো লাগে ( মন থেকে বললাম )। তুমি আমার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে খুব লজ্জ্বা পাও, কিছু না বলে তুমি চলে যাও. যাওয়ার সময় আমি এটুকুই শুধু বলেছিলাম খুব ভালোবাসি, পাগলের মতো

ভালো থেকো তুমি,পরজন্মে আবার দেখা হবে

তোমার উত্তরে অপেক্ষায় আছি. বেশ কয়েকদিন পর তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ আসে সেদিন তুমি বলেছিলে যে, তোমার খুব ভয় করে যদি পরে কখনো আমি ছেড়ে চলে যাই কিংবা ভুলে যাই অথবা কষ্ট দেই। আমি কথা দিয়েছিলাম, তোমাকে ছাড়া কোনো দিনও অন্য-কাউকে কখনো কল্পনা করব না, তোমাকে কখনো হারাতে দিব না। সবসময় আমার খুব কাছে রাখবো। কখনো কষ্টে রাখব না (কথা দিয়ে ছিলাম)।





সেদিন তুমি ভয় কাটিয়ে শুধু বলছিলে সারাটা জীবন যেন তোমার হাতটা ধরে রাখি। আমি কথা দিয়ে ছিলাম। সেই থেকে আমাদের পথ চলা যেকোনো মুহুর্তে তুমি আমার সর্বদা পাশে ছিলে আমিও আমার জায়গা থেকে তোমাকে যতটুকু পেরেছি সব সময় তোমার কাছে ছিলাম । কখনো ভাবি নি আমাদের এই পথ চলাটা একদিন খুব জটিল হয়ে পরবে. আমরা যখন আমাদের সম্পর্কের কথা আমাদের পরিবারকে জানাই. তারা মেনে নেয় নি। অনেক বুঝাবার চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিবারের কেউই বুঝতে চাইলো না। পরিবার থেকে বলেছিল যদি আমরা বিয়ে করি তাহলে যেন এই পরিবারে আর ফিরে না আসি। কেউই বুজতে চাইলো না আমাদের সম্পর্কের মূল্যটা। একদিন তোমাকে নিয়ে নির্জন রাতে পালিয়ে চলে আসি এক অচেনা শহরে। যেখানে আমাদের ভালোবাসায় বাধা দেওয়ার কেউই ছিল না। ছিল না কোনো আত্মীয়স্বজন কিংবা পরিচিত কেউ


তোমাকে পাবার জন্য পরিবার ছেড়ে সেদিন আমরা এই শহরে চলে আসি। শুধু আমি একা তো পরিবার ছাড়ি নি তুমিও ছেড়ে চলে এসেছো। কিন্তু তোমার মনটা সেদিন খুব খারাপ ছিল। জিজ্ঞেস করতে তুমি বলেছিলে পরিবার ছেড়ে আসার জন্য খারাপ লাগেনি যতটা তার চেয়েও বেশি খারাপ লেগেছে, পরিবার আমাদের ভালোবাসাটা মেনে নেয় নি তার জন্যে। পরের দিন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি। সেদিন না, তোমাকে বউয়ের সাজে খুব অসাধারণ লাগছিল। আমি তো তোমার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারছিলাম না. তুমি বলেছিলে এমন করে কি দেখছো।


আমি : একটা চাঁদের টুকরাকে দেখছি, তোমাকে না আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তুমি এতটা লজ্জ্বা পেয়েছিলে যে, লজ্জ্বায় তোমার মুখটাই ঢেকে ফেললে। এভাবে আমাদের জীবনের নতুন একটা যাত্রা শুরু হয়


একটা চাকরি পেয়েছিলাম, মাস শেষে যে বেতন পাই, তাতে আমাদের সংসার হেসে-খেলে চলে যায়। এভাবে দিন কাটতে থাকে, সময় গড়াতে থাকে। একদিন তুমি আমার কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলতেছো যে, আমি নাকি বাবা হতে চলেছি। এই কথা শুনে কি যে খুশি, বলার অপেক্ষা রাখে না। সময় যেতে থাকে আর আমাদের সন্তান হওয়ারও প্রায় সময় চলে আসে তাই অফিস থেকে অগ্রিম স্যারকে বলে ২ মাসের ছুটি নিয়ে নেই। আর এই সময়টা একজন স্ত্রীর কাছে স্বামীকে কাছে পাওয়া থেকে বড় অন্য কিছু হতে পারে না। সারাদিন বাসার সব কাজ আমি করে ফেলি যাতে তোমার কোনো সমস্যা না হয়, তাই। তোমার সাথে হাসি তামাশা, গল্প করতে, আড্ডা দিতে দিতে বাবু হওয়ার সময়ও চলে এসেছে। একদিন হঠাৎ তুমি বলছো যে তোমার খুব পেটে ব্যাথা করছে। বুঝলাম যে বাবুর হওয়ার সময় চলে এসেছে। তাই দেরি না করে তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসি। ডাক্তার তোমাকে ইমার্জেন্সি-তে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। আমি অপেক্ষার প্রহর গুনতে-ছিলাম, সেদিন এক একটা সেকেন্ড যেন একটা ঘন্টার মতো ছিল





হঠাৎ রুম থেকে বাবুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম কিন্তু ডাক্তাররা কোনো খবর দিতে আসে নি। আমি রুমের সামনে পাইচারি করতে ছিলাম, কিছু হয় নি তো তোমার (ভাবতেছিলাম)। হঠাৎ একজন নার্স কান্না মাখা মুখে এসে বলতে ছিল যে। ‘দুঃখিত স্যার আমরা আপনার স্ত্রীকে বাচাঁতে পারি নি’। কথাটা শুনে যেন, আমার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ল। পাগলের মতো হয়ে গেলাম, দু’চোখ ভেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো।  কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি বলতে পারি না।


জ্ঞান ফিরলে দেখি সকল ডাক্তাররা আমার সামনে দাড়িঁয়ে রয়েছে, তারাও কান্না করতেছিল। ওদের মধ্যে একজন এসে বলতেছে, মাফ করে দিবেন স্যার আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে বাঁচাতে পারি নি। আমরা সকল ভাবে চেষ্টা করেছি তবুও আমরা ব্যার্থ হয়ে গেছি। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই যে, মা ও বাবু দু’জনে খুব বিপদে ছিল।যেকোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব ছিল, যখন আপনার কাছে জানার জন্য বের হব, ঠিক তখনি কিছু বুজার আগে, আপনার স্ত্রী হাতজোড় করে বলেছিল আমরা যেন আপনার সন্তানকে বাঁচাই।

উনি বলেন -  আমি জানি আমার স্বামীকে বললে তিনি আমাকে বাঁচাতে বলবে। তাই উনি অনেক হাত জোড় করে আপনার সন্তানকে বাঁচাতে বললেন। সময়ও কম ছিল. কি করব বুজতে পারলাম না। দু’জনকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলাম . কিন্তু পারি নি. ব্যর্থ হই। আমাদের মাফ করে দিবেন স্যার। 

‘সেদিন কিছু বলার ছিল না’। যে সন্তানের জন্য এত কষ্ট করে জীবনের মায়া ত্যাগ করলে, দেখ সে সন্তান আজ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে। কখনো কখনো ভেবেছিলাম তোমার কাছে চলে আসব। কিন্তু তোমার রেখে যাওয়া সোনা-মণির জন্য আসতে পারি নি। ওকে কখনো তোমার না থাকার অভাব বুজতে দেই নি। খুব ভালোবাসি ওকে

‘‘ভালো থেকো তুমি, পরজন্মে আবার দেখা হবে’’

( সমাপ্ত )



---------------------------
যদি আমাদের সাইটের পোস্টগুলো আপনার একটু হলেও উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এই রকম নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথে থাকুন

[ যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে ]

Post a Comment

3 Comments

Your comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)