ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন। দেখা গেলো আপনার এখন কাজ করতে ইচ্ছা করছে না, আপনি করবেন না। যখন ইচ্ছা করবে তখন আবার চাইলেই করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং কি :
ফ্রিল্যান্সিং শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে "মুক্তপেশা। ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ে অনলাইন আয়ের একটি জনপ্রিয় উৎস। উইকিপিডিয়ার মতে, ফ্রিল্যান্সিং বলতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে মু্ক্তভাবে কাজ করাকে বোঝায়। যারা এধরনের কাজ করেন তাদের বলা হয় মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিলেন্সার এবং যিনি ফ্রিলেন্সারের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে কাজটা করিয়ে নেন তাকে বলা হয় "বায়ার"। আবার বায়ার প্রতিষ্ঠা বা ব্যক্তির দৃষ্টিকোন থেকে এই পেশাকে আউটসোর্সিংও বলা হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে নিজের বাড়ি থেকে জীবিকা নির্বাহের সর্বোত্তম উপায়। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ ব্যক্তিদের ইনকামের মাধ্যম হিসেবে বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন, যেমন :
- রাইটার বা
কপিরাইটার
- ডেভলপার / কোডার /
প্রোগ্রামার
- ডিজাইনার
- ভিডিওগ্রাফার
- ডাটা এন্ট্রি
- মার্কেটিং
প্রফেশনাল
- ট্রান্সলেটর
- পিআর ও
ব্র্যান্ডিং
- একাউন্ট্যান্ট
- এইচআর ম্যানেজার
- এসইও প্রফেশনাল সহ এই রকম শতশত কাজ ইত্যাদি
কি কি দক্ষতা লাগবে ফ্রিল্যান্সিং করতে :
অনেকেরই কনফিউশন থাকে যে আসলেই কি আমি ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) করতে পারবো? কি কি জিনিস দরকার এই কাজের জন্য? আসলে সত্যি কথা বলতে তেমন কিছুই লাগবে না আপনাকে এই পেশা শুরু করার জন্য। প্রথম যে জিনিসটা আপনার লাগবে সেটি হলো ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য্য। এগুলো থাকলেই আপনি এই সেক্টরে নিমিষেই সফল হবেন। এর পাশাপাশি আপনার দরকার হবে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারনা ও গুগল এবং ইউটিউব থেকে বিভিন্ন রিসোর্স খুঁজে বের করার দক্ষতা এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। এই ছিল মুলত প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যোগ্য করে তুলবে। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নেয়া কাজগুলি আপনি যেহেতু ঘরে বসেই করতে পারবেন তাই এর জন্য আপনার কোনো আলাদা জায়গার প্রয়োজন পরবে না। কারণ, এ কাজের জন্য যা প্রয়োজন তা হলো – একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার, ইন্টারনেট কানেকশন ও আপনার কাজের দক্ষতা।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন :
ইন্টারনেট এখন মানুষের হাতে হাতে চলে এসেছে। নিজের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে কাজ খোঁজা থেকে শুরু করে, কাজটি তৈরি করে আপনার ক্লায়েন্ট এর হাতে পৌছে দেওয়া পর্যন্ত পুরাটা সময় আপনাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই থাকতে হবে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে টাকা আয় করার জন্য আপনার প্রচুর নতুন নতুন কাজ বা প্রজেক্ট এর প্রয়োজন পরবে। আর এজন্য আপনাকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার দক্ষতা মানুষকে জানাতে হবে, যাতে মানুষ আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারে এবং আপনাকে কাজ দিতে আগ্রহী হয়।
নিজের দক্ষতা প্রচার করলে, লোকেরা জানতে পারবে যে আপনি কোন কাজের এক্সপার্ট এবং কোন কাজ আপনি তাদেরকে করে দিতে পারবেন। ধরুন আপনি রাইটিং কিংবা ভিডিও এডিটিং তৈরি করতে পারদর্শী। এক্ষেত্রে, আপনি যদি মানুষকে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে না জানান তাহলে তারা জানবে কিভাবে যে আপনি তাদেরকে রাইটিং বা ভিডিও এডিটিং এর কাজ করে দিতে পারবেন ?
আশা করি বুঝতে পেরেছেন আপনার কাজের কাজের জন্য মার্কেটিং কতটা জরুরি। তাই,ফ্রিল্যান্সিং-এ ক্যারিয়ার শুরু করার সাথে সাথে, নিজের কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার অনলাইনে প্রচার বা মার্কেটিং করতে হবে।
নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন :
শুরু করার আগেই আপনাকে
আপনার লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। লক্ষ্য ঠিক করার ক্ষেত্রে আপনাকে আগে ভাবতে হবে আপনি কতটুকু কাজ করতে চান বা কত সময় ধরে কাজ
করতে চান। এটাও নিশ্চিত হতে হবে
যে আপনি এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে চান নাকি পার্টটাইম হিসেবে চালিয়ে যেতে চান। এসব কিছু আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে। যাতে আপনি আপনার
লক্ষ্যে অটল থাকতে পারেন।
যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান তা বাছাই করুন :
আপনাকে বাছাই করতে হবে কোন টপিক নিয়ে কাজ করতে চান। কোন টপিকে আপনার দক্ষতা রয়েছে । কারণ যে বিষয়ে আপনার দক্ষতা এবং আগ্রহ উভয়ই আছে সে বিষয় নিয়ে সহজে আপনার অধৈর্য্য আসবে না। এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডিজাইনিং, কোডিং, লগো ডিজাইনিং, ভিডিও এডিটিং, মার্কেটিং ইত্যাদি কাজের মধ্যে কোনটি বা কোনগুলো নিয়ে শুরু করবেন।
কোন কোন প্লাটফর্ম বা ওয়েবসাইটে কাজ করবেন :
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সিং হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সাইট কিংবা মার্কেটপ্লেস গুলিতে কাজ শুরু করতে পারেন। এইসব সাইটগুলিতে বিভিন্ন ক্লায়েন্টরা বিভিন্ন রকমের কাজ করানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে এবং অপরদিকে ফ্রিল্যান্সাররা এই সাইট গুলিকে ব্যবহার করে নতুন নতুন কাজ খোঁজার জন্য। মনে রাখবেন, মানুষ তাদের কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য এই সাইটগুলিতে অনেক বিশ্বাসী ফ্রিল্যান্সারদের খুজ করে থাকে। আপনি যদি সময় মত আপনার ক্লায়েন্টকে ভালো ভাবে কাজ কমপ্লিট করে দিতে পারেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার ক্যারিয়ারে এ অনেক ভালো প্রভাব ফেলবে। কারন তারা একবার আপনার কাছ থেকে ভাল সার্ভিস পেলে তারা আপনার উপর ভরসা করতে শুরু করবে এবং পরে বার বার আপনাকে দিয়ে করাবে। এছাড়াও তারা অন্যান্যদের সাজেস্ট করবে যাতে তারা আপনাকে কাজ দেয়।
ঘরে বসে কাজ করার জন্য জনপ্রিয় ৩ টি ফ্রিল্যান্সিং সাইট :
ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলিতে আপনার যা করতে হবে :
ওয়েবসাইটগুলিতে গিয়ে প্রথম যে কাজটি করবেন তা হল আপনার নিজের জন্য একটি একাউন্ট তৈরি করবেন। এরপর নিজের একাউন্টে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, পড়াশুনা, প্রোফাইল পিকচার, দক্ষতা ইতাদি বিষয় এড করে নিবেন। এর পাশাপাশি আপনি আপনার ক্লায়েন্টদের জন্য কিভাবে এবং কি কি কাজ করতে চাচ্ছেন তাও প্রোফাইলে যোগ করে নিন। তাছাড়া, তারা তাদের কাজের জন্য আপনাকেই কেন সিলেক্ট করবে সুন্দর করে সেই কারন টাও একাউন্টেযোগ করে দিন।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন কিভাবে :
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে:
১) নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সক্ষমতা কতটুকু তা নিশ্চিত করুন। দক্ষতায় কমতি থাকলে তা শেখার মাধ্যমে পূরণ করুন। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলা দরকার সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হোন।ফ্রিল্যান্সিং করে কত ইনকাম করা যাবে :
ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয়ের নির্দিষ্ট কোন সীমা পরিসীমা নেই। আপনি যত কাজ করবেন তত টাকা আয় করতে পারবেন।
0 Comments
Your comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.
Emoji