ভালোবাসার মানুষ যখন কথা বলতে পারে না
একদিন খুব ভোরে হাটতে বের হই, হাটতে হাটতে ওর বান্ধবীর সাথে দেখা হয়। অনেকক্ষণ ওর সাথে কথা হয়। আমি ওকে আমার সব ঘটনা বলি। সে এসব শুনে আমাকে এমন একটা কথা বলল, যা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে যায়! সে বলল আসলে ভাইয়া ফারিয়া তো কথা বলতে পারে না (ওর নাম ছিল ফারিয়া)। সে তো একটি রোড এক্সিডেন্টে তার কথা বলার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। সেই জন্যে তো আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি।
আমি নিজেকে তখন খুব দোষী ভাবতে লাগলাম, তাকে নিয়ে আমি কত কিছু না ভেবেছি, কত না কটু কথা বলেছি (মনে মনে) ওই দিন বাসায় গিয়ে আমি কিছু চিরকুট লিখি, তারপর ওই চিরকুট গুলো সাথে নিয়ে আমি ফারিয়ার সামনে আসি। ফারিয়ার কাছে এসে আমার লেখা একটা চিরকুট ওর সামনে তুলে ধরি, যাতে লেখা ছিল, "দুঃখিত, আমি বুজতে পারি নি। আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
ফারিয়া তখন তার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে তার একটি নোট ও কলম নিয়ে কিছু একটা লিখছিল।লেখা শেষে দেখলাম ও বলতেছে - আমি তো কথা বলতে পারি না, আমাকে ভালোবেসে কি করবেন ?
আমি : কে বলছে তুমি কথা বলতে পারো না, এই যে আমরা কথা বলছি।সারাজীবন এভাবে কথা বলে যাবো, কোনো সমস্যা হবে না।
ফারিয়া : আপনার তো তাহলে খুব কষ্ট হবে ?
আমি : হোক না একটু কষ্ট, ভালোবাসার মানুষের জন্য এতটুকু কষ্ট না করতে পারলে, এটা আবার কিসের ভালোবাসা।
ফারিয়া: তাই বুজি।
আমি : জ্বি, তাই।
ফারিয়া : আপনার পরিবার মেনে নিবে তো!
আমি : না মানার কি আছে ?
ফারিয়া : এই যে আমি কথা বলতে পারি না।
আমি : কে বলছে তুমি শুধু একা কথা বলতে পারো না, এই যে আমিও তো আজ থেকে মুখে কথা বলতে পারছি না।
ফারিয়া : আপনি সত্যি একটা পাগল।
আমি : জ্বি অনেক।
ফারিয়া : এত ডং করতে হবে না।
আমি : যাও করব না, এখন তো বল আমাকে ভালোবাসো কিনা ?
ফারিয়া : ভালো না ভাসলে কি আপনার এত প্রশ্নের উত্তর দেই, বোকা একটা।
আমি : হ্যাঁ, খুব বোকা।
এভাবে শুরু হয় আমাদের ভালোবাসার এক নতুন যাত্রা। আমাদের ভালোবাসার আজ ৩ বছর পূর্ণ হল, আমি চাইছিলাম এখন আমরা বিয়ে করে নিতে। ফারিয়াও রাজি ছিল, কিন্তু ওর ভয় ছিল আমার পরিবার মেনে নিবে তো। আমি বললাম তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি সব ব্যবস্থা করে নিব। সেদিন বাসায় এসে আমি বাসায় আব্বু-আম্মু ও ভাইয়া-ভাবিকে আমার ভালোবাসার মানুষের কথা বলি।
সে যে কথা বলতে পারে না সেটাও। সবাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে আব্বু বলতেছে দেখ বাবা ভালোবাসা অন্যায় নয়, মেয়েটি কথা বলতে পারে না সেটা আমাদের সমস্যা হবে না, কিন্তু তুই সংসার করতে পারবি কিনা সেটা তুই ভালো করে জানস। কারণ সারাটা জীবন তো তোকে পাশে থাকতে হবে।
আমি : বাবা, আমাদের সম্পর্ক ৩ বছর হল। আমি সব কিছু মানিয়ে নিয়েছি। আর ও খুব ভালো মেয়ে তোমরা দেখলে বুজতে পারবে।
আব্বু : আচ্ছা, আমরা আগামীকাল ওর পরিবারের সাথে কথা বলব। কি বলিস রুবেল (আমার বড় ভাইয়ার নাম) ?
ভাইয়া : আচ্ছা আব্বু।
পরের দিন সবাই ফারিয়ার বাসায় ফারিয়াকে দেখতে যাই। আব্বু-আম্মু ও ভাইয়া-ভাবির খুব পছন্দ হয় ফারিয়াকে। কথা-বার্তা শেষে আমাদের বিয়ের তারিখ সবাই ঠিক করে। পরিবারের সম্মিলনে আমাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে ফারিয়া পরিবারের সবার মন জয় করতে থাকে। বাসার সবাই ফারিয়াকে এতটাই ভালোবাসে যে, আমিও যে এ বাসার একটা ছেলে সবাই সেটা ভুলে গেছে। এভাবে সময় গড়াতে থাকে, আমাদের ঘর আলোকিত হয়ে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান।
বাসার সবার মধ্যমণি এখন আমাদের ছোট্ট বাবুটা। বাবুকে সবচেয়ে বেশি আদর করে আমার ভাবি। ওনার কোনো সন্তান নেই। ডাক্তার বলেছিল কি একটা সমস্যার জন্য ভাইয়ার কোনো সন্তান হবে না। যাই হোক, আমাদের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু এখন আমাদের ছোট সোনামণিটা। ওকে ঘিরে এখন আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা।
(সমাপ্ত)
2 Comments
Nice story
ReplyDeleteNice
ReplyDeleteYour comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.
Emoji