এসএসডি - SSD এবং এইচডিডি - HDD এর মধ্যে পার্থক্য

কম্পিউটারের অন্যতম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার হচ্ছে HDD ও SSD । ‍যদি আপনি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে কমবেশি HDD ও SSD সম্পর্কে ধারণা রয়েছে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষন করে রাখতে এই ডিভাইস গুলো ব্যবহার করা হয়। এই ডিভাইস ইন্টার্নাল, এক্সটার্নাল অথবা পোর্টেবল হয়ে থাকে।

এসএসডি - SSD এবং এইচডিডি - HDD এর মধ্যে পার্থক্য

এসএসডি (SSD) কী :

এসএসডি হলো ডেটা সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত একটি ডিভাইস। SSD/এসএসডি এর পূর্ণ রূপ Solid state drives/সলিড স্টেট ড্রাইভ। এটি এক প্রকার ফ্ল্যাশ মেমোরি ডিভাইস। এগুলো অনেক উচ্চ গতি সম্পন্ন এবং ব্যয়বহুল। এসএসডি’র তথ্য সংরক্ষন করার পদ্ধতি এইচডিডি থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। এর কোন মেকানিক্যাল অংশ নেই, পুরোটাই ইলেক্ট্রনিক


এসএসডি’র ভেতরে ন্যান্ড ফ্লাশ মেমোরি চিপ থাকে। সিলিকন দ্বারা নির্মিত এই মেমোরি চিপের মধ্যে তথ্য সংরক্ষন করা হয়। আর এই চিপকে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্ল্যাশ কন্ট্রোলার। মেমোরি চিপের মধ্যে কন্ট্রোলার দ্বারা তথ্য জমা করা হয়। কন্ট্রোলারের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে এসএসডির তথ্য রিড ও রাইট করার ক্ষমতা।



এইচডিডি (HDD) কি :

HDD হলো এক ধরনের স্টোরেজ মিডিয়া যা কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়। এটা ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মধ্যে দ্বিতীয় স্টোরেজ জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিভাইস। HDD/এইচডিডি এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে hard disk drives/হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ। এটি এক প্রকার ম্যাগনেটিক স্টোরেজ ডিভাইস। হার্ড ডিস্ক কথাটি থেকেই বোঝা যাচ্ছে ডিস্ক বা চাকতি জাতীয় কিছুর সম্পর্ক আছে। আধুনিক একটি হার্ড ডিস্ক এর অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী কভারটি খুললে দেখা যায় কয়েকটি ডিস্ক বা চাকতি কয়েক স্তরে সাজানো আছে। যাদের প্লেটার বলা হয়। সকল তথ্য ম্যাগনেটিক হেড এর মাধ্যমে প্লেটার-এ রাইট করা হয়।


প্রত্যেকটি চাকতি খুব পাতলা হয়ে থাকে। এসব চাকতির সংখ্যা হার্ড ডিস্ক এর মোট ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করে। আর নামের সাথে বৈশিষ্ট্যের আছে মিল কারণ, চাকতিগুলো বেশ শক্ত। প্রত্যেকটি চাকতি একটি শক্তিশালী মোটরের সাথে যুক্ত থাকায় একইসাথে অনেক উচ্চ গতিতে ঘুরতে পারে। এই ঘূর্ণনের উপর নির্ভর করে অনেক কিছু। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো তথ্য ট্রান্সফার রেট। অর্থাৎ ঘূর্ণন যত বেশি হবে তথ্য ট্রান্সফার তত দ্রুত হবে। এই ঘূর্ণন মাপার একক হলো আরপিএম (rpm) বা রেভোলুশনস পার মিনিট। সাধারণত এখনকার হার্ড ডিস্ক গুলোতে ঘুরার পরিমান হার্ড ডিস্ক ভেদে ৪,২০০ থেকে ১৫,০০০ আরপিএম এর মধ্যে হয়ে থাকে।

HDD এবং SSD এর মূল্য এবং ধারণক্ষমতা :

মূল্য এবং ধারণক্ষমতার দিক থেকে এইচডিডি এসএসডি’র থেকে অনেক এগিয়ে আছে। মাত্র কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করলে একটি টেরাবাইট এইচডিডি কেনা যায়। অপরদিকে টেরাবাইট এসএসডি কিনতে এইচডিডি থেকে কয়েকগুন বেশি পরিমান মূল্য ব্যয় করতে হয়, যা বেশিরভাগ মানুষের ধারণক্ষমতার বাহিরে। তবে কম্পিউটারকে ফাস্ট রাখতে অল্প ধারণক্ষমতার বিভিন্ন কোম্পানির ‍এসএসডি রয়েছে যা কমবেশি সকল কম্পি্উটার ব্যবহারকারী ব্যবহার করে থাকে



HDD এবং SSD এর কার্যক্ষমতা :

সাধারনভাবে কার্যক্ষমতার দিক থেকে এসএসডি এইচডিডি’র থেকে বহুগুন এগিয়ে। কারণ SSD-তে তথ্য রিড-রাইট করতে কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়। যা HDD থেকে দ্রুত তথ্য রিড-রাইট করতে পারে। এছাড়াও সব তথ্য গুলো একত্রে একটি ফ্ল্যাশ মেমোরির ভেতর অবস্থান করে। যার ফলে যখন কোনো তথ্যর জন্য অনুসন্ধান করা হয় তখন এটি খুব দ্রুত রিড করতে পারে। আর অপর দিকে HDD তে প্লেটার-এ তথ্য রিড-রাইট করতে রিড/রাইট হেড ব্যবহার করা হয়।HDD তে তথ্যগুলো এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যখন কোনো তথ্যর জন্য অনুসন্ধান করা হয় তখন প্লেটার ঘুরতে থাকে এবং হেড দিয়ে এলোমেলো ভাবে তথ্য রিড করা হয়। তাই এতে সময় লাগে। কখনো কখনো প্লেটারে প্রচুর ক্লাষ্টার জমে যায়, ঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করা না হলে এর কারণে স্পিড কমে যায়।

কম্পিউটারের জন্য কোনটি ব্যবহার করবেন, HDD নাকি SSD :

একটা লাইব্রেরীতে হেটে বইয়ের স্টল থেকে বই খুঁজে বের করে পড়া সহজ নাকি যখনই বই পড়ার দরকার ঠিক তখন কোনো অনলাইন লাইব্রেরী থেকে কমান্ড দেয়ার সাথে সাথে ম্যাজিকের মাধ্যমে বই আপনার সামনে এসে পরলো, কোনটি সবচেয়ে দ্রুততম সিস্টেম ? নিঃসন্দেহে দ্বিতীয়টি। ঠিক তেমনি ভাবে বলা যায় এইচডিডি (HDD) চেয়ে এসএসডি (SSD) সেরা তবে কেনার পূর্বে প্রয়োজন অনুসারে বিবেচনা করা উচিৎ। যদি বেশি তথ্য সংরক্ষন করার প্রয়োজন হয় তবে এইচডিডি ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ, বেশি ধারণক্ষমতার এসএসডি এখনো বাজারে পাওয়া যায় না আর পাওয়া গেলেও তা অনেক চড়া মূল্যে কিনতে হয়। যদি বেশি তথ্য সংরক্ষন করার প্রয়োজন না হয় তবে এসএসডি ব্যবহার করা উচিৎ। আবার চাইলে এইচডিডি এবং এসএসডি দুটোই একসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে এসএসডিকে শুধু অপারেটিং সিস্টেমেরে জন্য ব্যবহার করতে হবে। আর এইচডিডিকে তথ্য সংরক্ষনের জন্য ব্যবহার করতে হবে। এতে অপারেটিং সিস্টেমক অনেক দ্রুত কাজ করবে।

Post a Comment

0 Comments