ইন্টারনেট ব্যাংকিং এ যেসকল সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন

ইন্টারনেট ব্যাংকিং এ যেমন অসংখ্য সুবিধা রয়েছে ঠিক তার বিপরীতে অনেক অসুবিধাও রয়েছে। এখানে প্রতারণা ও হ্যাকিং এর মত ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। আমাদের কিছু অসতর্কতার কারণে দেখা যায় কিছু মানুষ অসাধু উপায় অবলম্বন করে আমাদের মোবাইলে থাকা টাকা অনায়াসে চুরি বা হ্যাক করে নিয়ে যায়। তাই ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। আজকের এই পোস্টে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন তা বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এ যেসকল সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন

নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা :

ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। সহজে আইডিয়া করা যায় এমন কোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা ৷ ছোট ও বড় হাতের অক্ষর মিলিয়ে সর্বদা চেষ্টা করবেন পাসওয়ার্ড দিতে।

আপনার নিজের নাম বা আপনার প্রিয় কিছুর নাম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। আপনার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয়সমূহ পাসওয়ার্ডে যুক্ত করুন। পাসওয়ার্ড যত বড় হবে, ততো বেশি শক্তিশালী হবে। আপনার পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ৮-১০ ক্যারেক্টার লম্বা করুন। (অবশ্য ব্যাংকের পলিসি ভিন্ন হলে আলাদা কথা)। তবে পাসওয়ার্ড যত কঠিনই হোক না কেনো, আপনি যেন উক্ত পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারেন অথবা নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।


পাবলিক Wifi বর্জন করা :

পাবলিক Wifi নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সমস্যা হলো এসব নেটওয়ার্কের পেছনে থাকা লোকজন আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড অ্যাকসেস করতে পারে। যার ফলে আপনি যদি আপনার ইমেইল একাউন্টে বা ব্যাংকিং একাউন্টে লগইন করেন, সেক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। তাই যথাসম্ভব যেকোনো ধরনের পাবলিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

নিয়মিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করা :

সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার ইন্টারনেট ব্যাংকের স্টেটমেন্ট চেক করার। প্রতি মাসে অন্তত এক থেকে দু’বার হলেও আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করার চেষ্টা করুন।

প্রতারণা থেকে সাবধান থাকা :

কোনো ব্যাংক আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, একাউন্টের ডিটেইলস, ইত্যাদি সেনসিটিভ তথ্য কল, ইমেইল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে জানতে চাইবে না। যখন আপনি কোনো অভিযোগ জানাবেন কিংবা কাজ করার জন্য ফোন করবেন ঠিক তখনই ব্যাংক আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ভেরিফিকেশনের জন্য তথ্য জানতে চাইতে পারে। অর্থাৎ মূল কথা হলো ব্যাংক নিজ থেকে কখনোই আপনার কাছ থেকে কোনো তথ্য জানতে চাইবে না। ই-মেইল বা টেক্সট মেসেজে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চাওয়া হলে তা এড়িয়ে চলুন। এছাড়া ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে আপনার ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে বিষয়টি জেনে নিতে পারেন।


ব্যাংক ইউআরএল টাইপ করা :

ব্যাংক থেকে আসা ই-মেইলে ক্লিক করে অনেকে সরাসরি ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টে লগিন করে ফেলে, তবে এটি ঠিক নয়। কোনো প্রতারণাপূর্ণ মেসেজও দেখে আসল মনে হতে পারে, কিন্তু এতে ক্লিক করলে আপনার ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিবার ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টে লগিন এর সময় ব্যাংক এর ইউআরেল টাইপ করে অথবা ব্রাউজারে আগে থেকে বুকমার্ক করা ব্যাংকিং পোর্টালে প্রবেশ করুন।

সব সময় লগ আউট করা :

কাজ শেষে অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্ট থেকে লগ আউট করতে ভুলবেন না। অ্যাকাউন্ট থেকে বের হওয়ার পর পরই অ্যাকাউন্টটি লগআউট করে নিন।

সর্বশেষ মনে রাখবেন ফিশিং স্ক্যাম এর ক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক ডিটেইলস চুরি করে নেওয়া হয় আপনি লটারি জিতেছেন বা কারো সাহায্য লাগবে বলে। এসব ই-মেইল যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন ও Spam হিসেবে মার্ক করে দিন। ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্ট সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা, জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন থাকলে তা সরাসরি ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল করে জেনে নিতে পারবেন।


উপরোক্ত উপায় ছাড়াও এমন আরো অনেক উপায় আছে যার মাধ্যামে আমি-আপনি ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে প্রতারণা ও হ্যাকিং এর হাত থেকে নিজেদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুরক্ষা রাখতে পারি। তাই নিজে সতর্ক হোন এবং অন্যদের যথাসম্ভব সতর্ক করার চেষ্টা করুন।

Post a Comment

0 Comments