দেখা হবে প্রিয় পরকালে । Bangla love story

দেখা হবে প্রিয় পরকালে (লেখা– মোঃ বিল্লাল হোসেন)

চিরচেনা মানুষটি আজ হাসপাতালের বেডে। জীবনের চেয়েও যে মানুষটারে এত ভালোবেসে ছিলাম, সে আজ চোখের সামনে নিথর হয়ে পড়ে আছে। যেন পুরো অন্ধকারে ঢেকে গেছে জীবনের মায়াজালটা। ডাক্তার বলেছে বড়জোর হলে রিতা (ভালোবাসার মানুষ) এক মাসের মতো বাচঁবে। ওই তো সেদিনও ভালো ছিল। মুখে ছিল একরাশ মায়াবী হাসি। নিমিষের মধ্যে যেন হারিয়ে গেলো সব।

Bangla love story

ক্যান্সারে আক্রান্ত। বুজতেই পারি নি, যখন বুজতে পেরেছি তখন সব শেষ হয়ে গেছে। যে মানুষটি নিজের মতো করে আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। সে মানুষটির দুঃখের দিনে আমি যে কিছুই করতে পারছি না। সব থেকেও যেনো কিছুই নেই আজ। তার পাশে হাত রেখে এতটুকুই বলি কিছু হবে না তোমার। নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে তার গালে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সে আমাকে বলেছিল দূর পাগল কাঁদছো কেন, এই তো আমি ঠিক আছি। খুব কান্না করছিলাম।


 
রিতা : আরে বোকা কাঁদে কেন। আমি চলে গেলে কি হয়ছে নতুন কাউকে খুজে নিবা। জীবন তো আর কারো জন্য থেমে থাকে না।


আমি : জানো রিতা যে দিন তুমি আমার জীবনে এসেছো, সেদিন থেকে কখনো তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করি নি। বিশ্বাস করতাম, একদিন তুমি আমার হবে।

রিতা : হ্যাঁ, এই যে হলাম। এখন তো আমি তোমারি ।

আমি : হ্যাঁ।

নার্স এসে ঔষুধ দিয়ে গেলো, এগুলো খাওয়ানো শেষে যখন ওকে ঘুমাতে বললাম সে বলছিল, কিভাবে ঘুমাবো, তোমাকে যে মন ভরে দেখতে চায়।

আমি : না ঘুমালে তোমার শরীর যে আরও খারাপ হবে,ডাক্তার দেখলে বকা দিবে।
 
রিতা : না না,আমি ঘুমাবো না। তুমি বসে বসে গল্প কর, আমি শুনি। 


কি গল্প বলব,, চোখের পানি তো থামাতে পারছি না। অনেক কষ্টে ঘুম পারাই তাকে। পানির জন্য উঠতে যাব, দেখি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখছে। যেনো আমি দূরে না যায়। আর উঠিনি, বসে থাকি এখানে।


 
নার্স এসে টেবিলে নাস্তা দেখে বলে, আপনি এখনো নাস্তা করেন নি ভাই। কিছু বলিনি শুধু হাতের দিকে ইশারা করে বলি, খাব পরে। নার্স আমার চোখের পানি দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে কান্না করতে থাকে আর বলে সত্যি আপনাদের ভালোবাসার তুলনা হয় না। নার্স টেবিল থেকে খাবারগুলো সামনে এনে বলে, নেন খেয়ে নিন। তা না হলে আপনার শরীর খারাপ হবে। পরে উনারে কে দেখবে।
 
আমি : আচ্ছা, আপনাকে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে,তাই না।
 
নার্স : একজন ভাইয়ের জন্য এতটুকু কষ্ট কি করতে পারি না নাকি। আর এটাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর হে আপনার চোখের পানিতে তো শার্টটা ভিজে গেছে। পাল্টিয়ে নিয়েন।
 
আমি : সে ঘুম থেকে উঠুক, পাল্টিয়ে নিব।
 
দিন গিয়ে রাত হল, রিতা চোখ খুলল। আমাকে দেখে বলল ঘুমাও নি।
 
আমি : এই তো ঘুমিয়েছি। তোমার ঔষুধ খাওয়ার সময় হল ঔষুধগুলো খেয়ে নাও আগে।
 
রিতা : মিথ্যা বলো কেন। তুমি যেভাবে বসে আছ ঠিক সেভাবে এখনো বসে আছো।
 
আমি : ঘুমাবো,আগে ঔষুধটা খেয়ে নাও। ঔষুধ না খাওয়ার নানা বাহানা। অনেক কষ্টে ঔষুধটা খাওয়ানো পর ডাক্তার এসে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে। কি অপরূপ মায়ার মানুষটি আজ খুব মলিন হয়ে শুয়ে আছে। চিরচেনা মানুষটি আজ যেন খুব অচেনা হয়ে পড়েছে। নার্স এসে পুরো রুমটা পরিষ্কার করে, আমাকে বিশ্রাম নিতে বলে।
 
আমি উনাকে বলেছিলাম, যার ভালোবাসার মানুষ ক্লান্ত হয়ে নিথর ভাবে শুয়ে আছে আমি কি করে ঘুমাবো বলেন। জীবনের শেষ দিনগুলো না হয় নাই ঘুমালাম। দিন যত যাচ্ছে রিতার অবস্থা তত খারাপ হয়ে পড়ছে। ডাক্তার খাবার সময় বাদে সবসময় ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে যাতে তার কষ্ট না হয়। এভাবে ১৭ দিন পার হল। আমাকে সে বলতেছে আজ যেন ঘুমের ইনজেকশন না দেওয়া হয়। ডাক্তার আর ইনজেকশন দেয় নি। আমার দিকে চেয়ে চেয়ে বলতেছে, শক্ত করে হাতটা যেন ধরে রাখি। খুব যত্ন করে হাতটা চেপে ধরি।
 
আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসে। বুজতে পারি নি যে এই হাসিটাই জীবনের শেষ মায়াবী হাসি। শক্ত করে ধরে রাখা হাতটা কেমন জানি শীতল হয়ে গেছে, চেয়ে আছে একদৃষ্টে। বুজতে পারি চলে গেছে না ফেরার দেশে। তার চোখগুলো যেন কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি নি, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে ছিল। আর হয়তো শক্ত করে ধরা হবে না তার হাতটা, বসে থাকা হবে না তার ক্লান্ত দেহের পাশে। জীবনটা কেমন জানি অন্ধকারে ছেয়ে গেছে বুজতে পারি নি। তবে এতটুকু বলতে পারি।
জীবনের ক্ষণেক্ষণে তুমি ছিলে, তুমি আছো, তুমি থাকবে। দেখা হবে প্রিয় পরকালে।

(সমাপ্ত)

Post a Comment

0 Comments