যখন কেউ একজন ব্লগার হিসেবে ব্লগে কাজ শুরু করে তখন তার অনেক কিছুই অজানা থাকে। যার কারণে ব্লগ ক্যারিয়ারের শুরুতে নানা ধরণের ভুল করে থাকে। যার কারণে ব্লগে পর্যাপ্ত পরিমাণে ট্রাফিক আসেনা, যার ফলে অনেকে হতাশ হয়ে ব্লগিং ছাড়ার কথাও ভাবেন। অবশই, ব্লগিং এ করা ভুলগুলো একজন ব্লগিং ক্যারিয়ার পুরো ভাবে নষ্ট করে দিতে পারে।
কিন্তু, মনে রাখবেন, আপনি প্রথম অবস্থা থেকেই যদি, ব্লগারের করা ব্লগিং এর সেইসমস্ত ভুলগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ব্লগে ট্রাফিক ও ভিজিটর্স আসতে কোনো অসুবিধে হবে না। তাই, ব্লগিং এ সফলতা পাওয়ার জন্য এবং একজন প্রফেশনাল ব্লগার হওয়ার জন্য, কেবল ব্লগে আর্টিকেল লিখলেই চলবে না। ব্লগিং নিয়ে ছোট খাটো যে ভুলগুলো আছে এগুলা সংশোধন করে নিতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক যে, অধিকাংশ ব্লগাররা নতুন অবস্থায় যে ভুলগুলো করে থাকেন।
১. খারাপ ডোমেইন ও হোস্টিং :
বেশির ভাগ ব্লগাররা নতুন অবস্থায় ফ্রি ডোমেইন কিংবা কম দামী ডোমেইন ব্যবহার করেন। যার কারণে ব্লগে তেমন ভিজিটর আসে না। যদি আপনি প্রফেশনাল ভাবে ব্লগে কাজ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে একটি ভালো মানের ডোমেইন ব্যবহার করতে হবে। যেমন : .com, .net, .info, .org ইত্যাদি। এছাড়াও অনেকে না বুজে হোস্টিং ক্রয় করে থাকে, যেমন লো কোয়ালিটি বা সস্তা জাতীয়। একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগের হোস্টিং কোয়ালিটি কিন্তু তার সফলতার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী কারণ, যখন আপনি একটি সস্তা, এবং খারাপ ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করবেন, তখন আপনার ব্লগ অনেক স্লো কাজ করবে। ব্লগের লোডিং স্পিড কম হওয়ার সাথে সাথে সার্ভার বা ওয়েবসাইট অধিক পরিমানে ডাউন থাকবে। এতে, গুগল সার্চ আপনার ব্লগকে লো কোয়ালিটি ব্লগ বলে ভাববে এবং সেই সাথে আপনার ব্লগে গুগল সার্চ থেকে ট্রাফিক ও ভিজিটর আসার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে । তাই, ব্লগ তৈরি করার সময়, ফ্রি ডোমেইন, সস্তা ও খারাপ ওয়েব হোস্টিং কেনার ভুল কখনোই করবেন না। সব সময়, ভালো কোয়ালিটির, নামকরা এবং ব্র্যান্ডেড কোম্পানি থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং হোস্টিং কিনবেন
২. দ্রুত ফলাফলের প্রত্যাশা করা ও আয় করার চিন্তা :
ব্লগিং থেকে একটি মোটা অংকের টাকা উপার্জন করা যায় ঠিকই কিন্তু আপনি যদি অর্থকে একমাত্র মাত্র উদেশ্য ও গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাহলে আপনি ভুল করছেন। নতুন ব্লগারদের অন্যতম একটি ভুল হচ্ছে দ্রুত ফলাফল ও সাফল্য পাওয়ার প্রত্যাশা। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আজ একটি ব্লগ শুরু করবেন এবং দশ দিন পরেই অনেক ভিজিটর ও অর্থ উপার্জন করা শুরু করে দিবেন তাহলে তা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব, বাস্তবে না। কারণ আপনার ব্লগ সাইটটি গুগল বা সার্চ ইঞ্জিনগুলাতে ঠিকমতো লাইভ হতেই এক-দুই মাস সময় নেয়। তাই আপনাকে আপনার ব্লগ সাইটের প্রতি সময়, পরিশ্রম ও ধৈর্য দিতে হবে। তাই আপনি যদি একটি ব্লগ শুরু করার প্ররিকল্পনা করে থাকেন বা অলরেডি শুরু করে দিয়েছেন তাহলে নিজেকে সেরকম ভাবে তৈরি করুন।
৩. কনটেন্ট কপি করা :
নতুন অবস্থায় অনেক ব্লগাররা তাদের ব্লগের আর্টিকেল এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য অন্য কোন সাইট থেকে কন্টেন্ট কপি করে এনে নিজের সাইটে পোস্ট করে দেয় যা গুগল একদম সাপোর্ট করে না । আর এই কপিকৃত কন্টেন্ট এর কারণে পরবর্তী সময়ে গুগল অ্যাডসেন্সও পাওয়া যায় না। এছাড়া এধরণের সাইট গুগল যেকোন সময়ে ডিলিট করে দিতে পারে । তাই ব্লগিং শুরু করার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন। নিজে যতটুকু পারবেন, তা নিয়ে আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করুন। তাহলে ব্লগে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
৪. এসইও (SEO) না করা :
ব্লগিং এ যারা নতুন তাদের বেশিরভাগ এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন সম্পর্কে তেমন ধারণা নাই বললে চলে। অবশ্যই মনে রাখবেন একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের সাফল্য ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এসইও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্লগ সাইটে এসইও-র প্রয়োগ করে আপনি গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে সহজে রেঙ্ক করতে পারবেন যার ফল স্বরূপ আপনার সাইটে বেশি ভিজিটর আসবে। তাহলে আপনি ব্লগিং ক্যারিয়ারে সফল হতে পারবেন।
৫. ব্যাকলিংক তৈরি না করা :
আপনার মনে হয়তো একটি প্রশ্ন আসতেই পারে যে আমি ব্যাকলিংক তৈরি কেন করবো বা এর গুরুত্ব কি? তাহলে আপনাকে সবার প্রথমেই বলে রাখি যে কোনো ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের অফ পেজ এসইও রেঙ্কিংয়ের জন্য ব্যাকলিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের জনপ্রিয়তা, প্রাসঙ্গিকতা এবং আপনার সাইটের ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ব্যাকলিংকের গুরুত্ব থাকে। যখন কোনো সার্চ ইঞ্জিন বট আপনার সাইটটি ক্রল করার জন্য আপনার সাইটের সমস্ত URL বা পেজগুলি পরীক্ষা করবে তখন সে খুব গভীর ভাবে লক্ষ্য করবে যে কত গুলি হাই কোয়ালিটির ব্যাকলিংক আপনার সিটটিকে পয়েন্ট করছে।আপনার সাইটে যত বেশি উচ্চ মানের ব্যাকলিংক থাকবে বা লিংক তৈরি করবেন। আপনার তত বেশি সুযোগ থাকবে গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করার।
অর্থাৎ ব্যাকলিংকের গুরুত্ব হল:
- আপনার সাইট অর্গানিক ভাবে সার্চ রেঙ্কিং করতে পারবে।
- সাইটে অর্গানিক ভিসিটর্সের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
- আপনার সাইটের পেজগুলি গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত ইনডেক্স হবে।
- তার সাথে আপনার সাইটের ডোমেইন অথরিটিও বৃদ্ধি পাবে।
৬. আর্টিকেল লেখার আগে কীওয়ার্ড রিসার্চ না করা :
এসইও-র সর্ব প্রথম অংশ ও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলটি হল কীওয়ার্ড রিসার্চ, যাকে অন-পেজ এসইও এর মধ্যে ফেলা হয়। কিন্তু এরকম অনেক নতুন ও পুরানো ব্লগার আছে যারা আর্টিকেল লেখার পূর্বে কখনোই সঠিক ভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে না। কীওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে বিভিন্ন কীওয়ার্ড আইডিয়া পাওয়া যায় এবং জানা যায় যে ঠিক কোন কীওয়ার্ডগুলি বেশি সার্চ করা হয়। এবং সঠিক হাই কোয়ালিটি কীওয়ার্ড নির্বাচন ও ব্লগ পোস্টে ব্যবহার করার মাধমে সহজে নির্দিষ্ট কাস্টমারদের টার্গেট করা যায়। আর্টিকেলে কীওয়ার্ড ব্যবহারের ফলে সার্চ ইঞ্জিনের বুজতে সুবিধা হয় আপনার পোস্টের বিষয় কি এবং সে তখন নির্দিষ্ট ভিজিটরদের কাছে আপনার আর্টিকেলটি তুলে ধরে। সঠিক ভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে এবং ব্লগ পোস্ট লেখার সময় সেই সমস্ত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে, সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করার সুযোগ বেড়ে যায়। তাই আর্টিকেল লেখার পূর্বে কীওয়ার্ড রিসার্চকে গুরুত্ব দিন এবং অবশ্যই আর্টিকেলে কীওয়ার্ড রিসার্চ দ্বারা নির্বাচিত কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৭. ভুল আর্টিকেল স্ট্রাকচার বা লে-আউট :
অনেকেই আছে যারা কিনা আর্টিকেল বা ব্লগ লেখার সময় সঠিক ভাবে আর্টিকেল বা ব্লগে পোস্ট করার নিয়ম অনুসরণ করে না। আপনি যদি একটি উন্নত মানের ব্লগ পোস্ট লিখতে চান যা ভিজিটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে তাহলে অবশ্যই আপনাকে ব্লগ লেখার সঠিক নিয়মসমূহ জানতে হবে। অন্যদিকে আপনি যদি অগোছালো বা নিজের মতো করে আর্টিকেল লিখেন এবং সঠিক গঠন অনুসরণ না করেন তাহলে আপনার সাইটের ভিজিটররা ব্লগ পোস্ট পড়তে ইচ্ছুক হবে না বা পুরো না পরেই আপনার সাইট ত্যাগ করবে। অবশ্যই মনে রাখবেন সঠিক গঠন ও নিয়ম অনুসারে আর্টিকেল লিখলে তা আপনার আর্টিকেলের গুনগত মান বৃদ্ধি করে যার ফলে আপনার সাইটের ভিজিটরদের আর্টিকেলগুলো পড়তে ভালো লাগে ও সুবিধা হয়।
৮. ব্লগ পোস্টের ধারাবাহিকতা বজায় না রাখা :
আপনি যদি নিজের ব্লগ সাইটটিকে সাফল্য দিতে চান তাহলে আপনার মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা এবং ব্লগ পোস্টে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আপনি যদি নিজের ইচ্ছামতো ব্লগ পোস্ট তৈরি ও পাবলিশ করেন এবং নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা বজায় না রাখেন তাহলে কখনোই সাফল্য পাবেন না।আপনাকে নিয়মিত এবং প্রায়শই পোস্ট করতে হবে যাতে আপনার সাইটের ভিজিটররা কিছু না কিছু নতুন আপনার ব্লগ সাইট থেকে পায়। আর আপনি যদি তা না করেন তাহলে ভিজিটররা বার বার আসার পর আপনার সাইটে যদি কিছু না পায় তাহলে তারা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার সাইটে আসা বন্ধ করে দিতে পারে। তাই সর্বদা চেষ্ট করুন রেগুলার ব্লগ লেখার।
2 Comments
অসাধারণ উপস্থাপনা এবং অসাধারণ ব্যাখ্যা
ReplyDeleteThanks For Your Comment........
DeleteYour comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.
Emoji