কুলিং প্রযুক্তি :
কাতার যেহেতু একটি উষ্ণ দেশ তাই খেলার মাঠ ও দর্শক গ্যালারির তাপমাত্রা রাখা হয়েছে ২৬ডিগ্রি সেলসিয়াস যা সবার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক। ব্যবহৃত এই কুলিং প্রযুক্তি সাধারণ কুলিং প্রযুক্তির চেয়ে ৪০% অধিক টেকসই ও এনার্জি-এফিসিয়েন্ট। এই ইন্টেলিজেন্ট কুলিং প্রযুক্তির অসাধারণ একটি ফিচার হলো স্টেডিয়ামে থাকা মানুষের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে তাপমাত্রা সেট করা যাবে। সুতরাং বাইরের তাপমাত্রা যত কম বা বেশি হোক না কেনো, স্টেডিয়ামে থাকা খেলোয়াড় ও ফ্যানরা অন্তত তাপমাত্রার কারণে কোনো ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বেন না। এছাড়াও স্টেডিয়ামের বাতাস (এয়ার) ক্লিন ও পিউরিফাই করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
স্মার্ট ওয়াই-ফাই ও চার্জিং স্টেশন :
EIPapm শেডিং ওয়াইন্ড টার্বাইন সোলার প্যানেল ও বাইফেসিয়াল ফটোভোল্টেক প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যার ছায়ায় বসে ফোন ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে বা ওয়্যারলেসলি চার্জ করা যাবে। এছাড়া EIPalm কে ওয়াইফাই হটস্পট হিসেবেও ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এডভার্টাইজিং, মিস্ট কুলিং, সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা, লাইটিং ও স্পিকার ও EIPalm এর অংশ।
কার্বন-নিউট্রল ওয়ার্ল্ড কাপ :
কাতার অঙ্গিকার করেছে যে তারা প্রথম কার্বন-নিউট্রল ওয়ার্ল্ড কাপ হোস্ট করতে যাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই ইভেন্টের কার্বন ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেলতে গ্রিন প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো দুইটি স্টেডিয়ামের মধ্যকার দুরত্ব এক ঘন্টার কম ড্রাইভিং দুরত্বের মধ্যে রাখা হয়েছে, এতে ফ্যানরা একই দিনে দুইটি বা তার বেশি ম্যাচ এটেন্ড করতে পারবে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় অনেক এনার্জি সাশ্রয় হবে যা পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সম্পূর্ণ ডিসমাউন্টেবল স্টেডিয়াম :
৯৭৪ – এটি প্রথমত কাতার এর ইন্টারন্যাশনাল ডায়ালিং কোড (+৯৭৪), আবার রিসাইকেলড শিপিং কন্টেইনার এর সংখ্যাও এটি। আর এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে স্টেডিয়াম ৯৭৪ তৈরী হয়েছে, এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম স্টেডিয়াম যা তৈরীই করা হয়েছে ডিকনস্ট্রাক্ট করার লক্ষ্যে। এই অস্থায়ী ৪০,০০০সিটের ভেন্যু ডিসমেন্টেল করা হবে ও আফ্রিকায় অনুন্নত দেশগুলোতে এসিস্টেন্স হিসেবে প্রদান করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অথবা কিছু লিগাসি প্রজেক্টের সিরিজে এটি পুনরায় তৈরীর কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে এই স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
রিয়েল-টাইম ন্যাভিগেশন :
দোহার আশেপাশে থাকা সেন্সরের সাহায্যে ট্রাফিক, টেক্সি, পার্কিং, নতুন মেট্রো সিস্টেম এবং ভেন্যু এনট্রেন্স ও এক্সিট এর তথ্য পাওয়া যাবে একটি কাস্টম-মেড স্মার্টফোন অ্যাপে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে স্টেডিয়াম, শপিং সেন্টার ও এন্টারটেইনমেন্ট ভেন্যুর ইনডোর স্পেসে সহজে ন্যাভিগেট করা যাবে। দোহা’র আশেপাশে কানেক্টেড সেন্সর বসানো হয়েছে যার দ্বারা কাতারের আশেপাশে সহজে চলাচল করা যাবে।
মেট্রো, টেক্সি, পার্কিং, এন্ট্রেন্স ও এক্সিট পয়েন্ট, ইত্যাদি তথ্য প্রদানে সাহায্য করবে এসব সেন্সর যার ফলে রিয়েল-টাইম ইনফরমেশন ব্যবহার করে সেরা রাউট খুঁজে বের করা যাবে। আর এর সবই উল্লেখিত স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে সম্ভব হবে।
এলইডি লাইটিং :
স্টেডিয়ামে এলইডি লাইটিং নতুন কিছু নয়, কিন্তু কাতার এই সামান্য বিষয়টিকেও অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে যা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ এ দেখা যাবে। কালার-চেঞ্জিং লাইট এর পাশাপাশি অনেক ধরনের লাইট ইফেক্ট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের জন্য যা Al Bayt ও Luasil স্টেডিয়ামে ওপেনিং ও ক্লোজিং অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হবে। এসব লাইট এনার্জি-এফিসিয়েন্ট, নন-টক্সিক ও সাধারণ লাইটের চেয়ে ৬গুণ অধিক সময় ধরে কাজ করে।
ওয়েরেবল ইলেকট্রনিকস :
ইতিমধ্যে কাজ চলছে এমন কিছু প্রযুক্তির মধ্যে একটি হলো ওয়েরেবল ইলেক্ট্রনিকস। কেমন হয় যদি গায়ে থাকা শার্টে থাকা সেন্সরের মাধ্যমে হার্টবিট বা হাইড্রেশন মাপা যেতো? এই ধরনের প্রযুক্তির পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিকস নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে যা কাতার বিশ্বকাপে ফ্যানরা ব্যবহারের সুযোগ পেতে পারেন। বিশেষ মুহুর্তে এই ধরনের পরিধানযোগ্য স্মার্ট ইলেক্ট্রনিকস বেশ কাজে আসতে পারে।
ফুড টেকনোলজি :
নিজেদের সিটে বসে স্মার্টফোন অ্যাপ, Asapp এর মাধ্যমে ফুড অর্ডার করতে পারবেন দর্শকগণ। থাকছে না কোনো ধরনের অর্ডার লাইনে দাড়াঁনোর ঝামেলা কিংবা খেলার গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্ট মিস করার সম্ভাবনা। অ্যাপের মাধ্যমে ফুড অর্ডার করার পর এক্সপ্রেস কিউ এর মাধ্যমে খাবার সিটে পৌঁছে যাবে।
রোবট রেফারি :
কাতার বিশ্বকাপে আরো নিখুঁতভাবে অফসাইড ধরতে ইতিমধ্যে রোবট দ্বারা পরীক্ষা চালিয়েছে ফিফা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাতার বিশ্বকাপে খেলার মাঠে দেখা মিলবে এসব রোবট লাইন্সম্যানের।
কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হবে এমন সব প্রযুক্তির মধ্যে কোনটি আপনার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে। আর খেলা নিয়ে প্রয়োজনীয় টিপস ও ট্রিকস জানতে আমাদের সাথে থাকুন।
0 Comments
Your comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.
Emoji