কি দোষ ছিল আমার ! (মোঃ বিল্লাল হোসেন)
প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও দ্রুত অফিসের জন্য রওনা হলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় ফেলে এসেছি। সেটা নেওয়ার জন্য আবার বাসার দিকে যাত্রা শুরু করলাম। বাসার সামনে আসার পর দেখলাম সালমা কোথায় জানি যাচ্ছে। খুব অবাক হলাম, এই সময়ে তো তার বাসা থেকে বের হওয়ার কথা না, কিছু না ভেবে তার পিছু নিলাম। কোথায় যাচ্ছে আবার !
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম একটি রিক্সাতে উঠল। তাই আমিও একটি রিক্সাতে উঠে পড়ি আর ড্রাইভারকে বলি সামনে থাকা রিক্সার পিছু পিছু যেতে। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর সে একটি শপিং মলের সামনে নেমে পড়ে। দেরি না করে আমিও রিক্সা থেকে নেমে তাকে অনুসরণ করতে থাকি। কিছুটা সামনে যাওয়ার পর একটি জায়গায় দাড়িঁয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে, দেখেই মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুটা দূর থেকে তাকে আমি দেখছি। কয়েক মিনিট পর একটা ছেলে তার কাছে আসে। তার মুখে ফুটে উঠে এক রহস্যজনক হাসি। বুজতে সমস্যা হলো না, এদের মধ্যে যে কোন সম্পর্ক আছে। তারপর একজন আরেকজনের হাত ধরে লিফটে করে উপরে উঠতে শুরু করলো। বিষয়টা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। যাকে এতটা ভালোবাসি সে কিনা আজ চোখের সামনে এভাবে অন্য কারো হাত ধরে ঘুরাঘুরি করছে। তারপর নিজেই নিজেকে স্বাত্বনা দিয়ে তাদের পিছু নিতে শুরু করলাম।
বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাফেরা করার পর তারা শপিং মল থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু কিছুই কেনা কাটা করল না। বিষয়টা কিছুটা অদ্ভুত লাগলেও পরঃক্ষণে বুজতে পারলাম মূলত সময় কাটানোর জন্য এখানে আসা। শপিং মল থেকে বের হয়ে তারা সামনের একটি হোটেলে চলে যায়, কোন ভাবেই এগুলা মেনে নিতে পারতেছি না। প্রতিদিনের মতো আজও সালমা আমাকে ফোন করে বলে দুপুরে খাবার খেয়েছি কিনা। নিজেকে শান্ত রেখে উত্তর দিলাম হ্যাঁ খেয়েছি। তাকে জিজ্ঞাস করতে সে বললো সে খেয়েছে। এখন নাকি ঘুমাবে। তাই রেখে দিল। এভাবেই প্রতিদিন একই কথা বলতো কিন্তু আজ নিজের চোখে এগুলা দেখার পর বুজতে পারলাম মানুষটা আসলে আমার কেয়ার করত না বরং তার নিজের সুবিধার জন্য আমার খোজঁ নিত।
প্রায় এক ঘন্টা পর সে আর ছেলেটি হোটেল থেকে বের হয়ে চলে যায়। তাদের চলে যাওয়ার পর হোটেলে থাকা এক কর্মচারীর কাছে তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলাম তারা কি এখানে আজকেই এসেছে নাকি এর আগেও আসতো। প্রথমে ওই কর্মচারী কিছুই বলতে চাইছিলো না। পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে দেওয়ার পর উনি এমন কিছু বলল যা শুনে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। উনার বক্তব্য : আপনি কি ছেলে বা মেয়েটির কিছু হন আগে বলেন। আমি শান্ত গলায় উত্তর দিলাম, জ্বি মেয়েটির স্বামী হয়। তখন উনি বলল যেহেতু আপনি উনার স্বামী হন তাহলে বলাই যায়।
আসলে মেয়েটি আজকে যে ছেলেটির সাথে এখানে এসেছে সেটি কিন্তু তার আজকেই নতুন আসা না বরং সে এর আগেও আরো কয়েকবার এসেছে। তবে তারা পরিচয় দিয়েছে তারা স্বামী-স্ত্রী। তারা নাকি সামনেই কি কাজ করে তাই দুপুর হলে এখানে বিশ্রাম নিতে আসে। উনি এটাও বলে এরা প্রায় ১ বছর এখানে আসা যাওয়া করে। তখন নিজের চোখ দিয়ে অঝোঁরে পানি ঝরতে ছিল। তার সাথে আমার বিয়ে হলো মাত্র ৭ মাস। তাকে বিয়ের আগেও আমি বলেছিলাম যদি তার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক থাকে তাহলে যেন আমাকে বিয়ে না করে। কিন্তু সে বলছিল সে কখনো কারো সাথে কথাই বলে না আর সম্পর্ক কিভাবে থাকবে। কথাটা শুনে তখন আর কিছুই বলার ছিল না। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নিজের সবটুকু দিয়ে এই মানুষটিকে অনেক ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু সেই কিনা আমাকে এভাবে ঠকালো।
বাহিরে কিছু সময় কাটানোর পর অফিস ছুটির সময়ে বাসায় ফিরে আসি। ক্লান্ত শরীল নিয়ে বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি। সালমা দ্রুত আমাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দেয়। তাকে দেখা মাত্র আমার রাগ দ্বিগুন বেড়ে যায়। তারপরও নিজেকে শান্ত করে শুয়ে থাকি। অফিস থেকে একের পর এক ফোন করছিলো। তার উপর সালমা ডাকাডাকি করছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। খিদা নাই বলে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ডাকাডাকি করার পর বলতেছে অফিসে যাব কিনা। কিছু না বলে, শুয়ে থাকি। বাবা-মা পছন্দ করেই বিয়ে দিয়েছিল। বলছিল মেয়ে সংসারী। কোন ছেলেদের সাথে সম্পর্ক নাই। নিজেও যখন জানতে চেয়ে ছিলাম তখনও সে বলছিল তার কোন সম্পর্ক নাই কারো সাথে। কিন্তু একটা মানুষ দিনের পর দিন এভাবে পরপুরুষের সাথে কাটিয়ে কিভাবে এত স্বাভাবিক থাকতে পারে। নিজের আবার কোন ভুল হচ্ছে না তো। অন্য কাউকে দেখেছি কিংবা স্বপ্ন দেখেছি। এগুলা ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ সালমা এসে বলতেছে দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য।
এই তো সকাল ছিল এখন আবার দুপুর হয়ে গেল। সময়গুলাও যেন দ্রুত চলে যাচ্ছে বুজতেই পারছি না। তার হাতের খাবার খেতেও ভয় হচ্ছে খাবারের মাঝে আবার কোন বিষ দিয়ে রাখে নাইতো। পরের দিন আবার অফিসের জন্য বের হয়ে বাড়ির সামনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। আমি সালমাকে সত্যি দেখেছি নাকি এটা আমার কল্পনা। এগুলা ভাবতে ভাবতেই দেখি সালমা রাস্তায়। বুজতে দেরি হলো না আজকেও আবার সে ছেলেটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, তার মানে আমি যা ভাবছি তা আমার কল্পনা বা ভুল কিছুই না। তাই দেরি না করে পকেট থেকে মোবাইলটি নিয়ে সালমার সকল ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করতে থাকি।
সেই দিনও তাকে বিন্দু মাত্র বুজতে দেই নাই তার সকল কর্মকান্ড যে আমি জানি। কখনো ভাবিনি আমার সাথে এমন হবে। পরের দিন অফিসে না গিয়ে সালমার বাবার বাসায় চলে যাই। তাদের বাসায় গিয়া এতটুকুই বলি আচ্ছা আমার অপরাধটা কি ছিল যদি বলতেন। কেন জেনে শুনে আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিলেন্। তারা কিছু বলার আগে আমি তাদের সবকিছুই বলি আর সাথে ভিডিওটিও দেখাই। ওর মা এতটুকুই বলে আমার মেয়ে এমন ছিল সত্যি আমরা জানতাম না। অশ্রু মাখা কন্ঠে এতটুকুই বলি চাইলে আমি আমার সাথে অন্যায় হওয়া প্রতিশোধ নিতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করব না। আপনাদের মেয়েকে আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর আপনার মেয়ে এসবের কিছুই জানে না। পরের দিন ওর বাবা, ওর মায়ের অসুস্থতার বাহানা দেখিয়ে ওকে নিয়ে যায়।
তার কয়েকদিন পর ডিভোর্সী কাগজপত্র নিয়ে ওর বাসায় গেলে শুনতে পারি, যে ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক সে তাকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়। ডিভোর্সের কাগজ দিয়ে সাইন করার আগে ওর মা এতটুকুই বলে বাবা একটু ভেবে দেখো। কিছু বলার ছিল না। সাইনটা নিয়ে চলে আসার সময় এতটুকুই বলি যাকে এত ভালোবাসতাম সে যখন এভাবে ধোকা দিবে সেটা কল্পনায়ও ভাবি নাই। বিশ্বাস করতাম। মন থেকে ভালোাবাসতাম।
যদি তার কোনো চাহিদা অপূর্ণ থাকত তাহলে আমাকে বলতো আমি তা পূরণ করার চেষ্টা করতাম। আচ্ছা আঙ্কেল আপনিই বলুন যে মানুষটি দীর্ঘ ১ বছর অবৈধ সম্পর্ক বজায় রাখছে সেটা জানার পরও কি তাকে ভালোবাসা যায়। হয়তো একসাথে থাকা সম্ভব কিন্তু ভালোবাসা সম্ভব না। বরং তার প্রতি রাগ ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ পাবে না। শুধু আজও জানতে পারি নাই কি দোষ ছিল আমার, যার কারণে আমাকে এইভাবে ঠকতে হলো।
(সংক্ষিপ্তকরণ)
টীকা : একজন স্বামী বা স্ত্রী হিসাবে আপনার যা প্রয়োজন তা খোলামেলা আলোচনা করুন। বিয়ের আগে কোন প্রেম ভালোবাসা থাকলে কখনো অন্যকে বিয়ে করে ঠকানোর চাইতে বিয়ে না করাই ভালো। আজকে এই সমাজে পরকীয়া নামক সম্পর্কের কারণে ডিভোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে হত্যার শিকারও হচ্ছে অনেক নারী বা পুরুষ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই ডিভোর্সের অন্যতম কারণ ছেলে-মেয়েদের বিয়ের আগে ভালোভাবে খোজঁ না নিয়ে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেওয়া। যার কারণে একটা মেয়ে বা ছেলেকে এভাবে ঠকতে হয়। কারণ হিসাবে নানা কারণই থাকতে পারে। হতে পারে ছেলে বা মেয়ের আগে থেকে কারো সাথে সম্পর্ক আছে। হতে পারে মনের অমিল। হতে পারে শারীরিক বা মানসিক সমস্যা। হতে পারে অনেক কিছুই।
( সমাপ্ত )
0 Comments
post a comment
Emoji