ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত বলতে কী বুঝায়। সতর্ক সংকেত কয়টি ও কি কি। Cyclone warning signal

যখন কোন ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তখন আমরা গণমাধ্যমে দেখি সাংবাদিকরা বিভিন্ন সতর্ক সংকেত ঘোষণা দিয়ে থাকে। মূলত মানুষকে সতর্ক করার জন্য এই সতর্ক সংকেত ঘোষণা করা হয়, যেন মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত শুনা মাত্র বুজতে পারে এর ভয়াবহতা কেমন। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য ১১টি সতর্ক সংকেত রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে ১১টি সতর্ক সংকেতের নাম সহ থাকছে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা। 

ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত

ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত যাই কোন না কেন, অবশ্যই আমাদের আগে থেকে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ঘূর্ণিঝড়ের ১১ টি সতর্ক সংকেত এর নাম ও প্রত্যোকটি সতর্ক সংকেতে ঘন্টায় বাতাসে গতিবেগ কেমন হতে পারে।

১১টি সতর্ক সংকেতের নাম সহ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

১. নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত : বঙ্গোপসাগরের কোনো একটা অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সেখানে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে (একটি লাল পতাকা)। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কি.মি

২. নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত : সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি।

৩. নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত : বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন (দুইটি লাল পতাকা)। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কি.মি।

৪. নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত : বন্দর ঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে, তবে বিপদের আশঙ্কা এমন নয় যে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি।



৫. নম্বর বিপদ সংকেত : অল্প বা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং  ঝড়টি বন্দরকে বাঁদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি।

৬. নম্বর বিপদ সংকেত : অল্প বা মাঝারী ধরনের ঝড় হবে এবং আবহাওয়া দুযোগপূর্ণ থাকবে। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি।

৭. নম্বর বিপদ সংকেত : অল্প অথবা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড় হবে এবং এজন্য আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (তিনটি লাল পতাকা)।যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি।

৮. নম্বর মহাবিপদ সংকেত : ন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে,  প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁদিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি. বা তার বেশি হতে পারে।

৯. নম্বর মহাবিপদ সংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে, প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি. বা এর বেশি হতে পারে। 

১০. নম্বর মহাবিপদ সংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি. বা এর বেশি হতে পারে। 

১১. নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেত : আবহাওয়ার বিপদসংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।



সচেতন হওয়া :

ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। অতীতে এ দেশটি এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেকবার শিকার হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কোন প্রকার হাত নেই। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতিও হয়তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তবে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আগাম প্রস্তুতি নিতে পারলে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে যেসকল মানুষ বসবাস করে, তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রে যেসকল জেলে মাছ ধরতে যান, তাঁদের জন্য সতর্কতা ও নিরাপদে ফিরে আসার জন্য আগাম ঘোষণা, বন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষার যথাযথ উদ্যোগ নিলে জান ও মাল, দুই ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ ছাড়া এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর চিকিৎসা সেবা বা খাদ্য ও পানীয় জোগান দেওয়া সহ যেসব জরুরি করণীয় থাকে, সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ধার অভিযান ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা সম্ভব। দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দক্ষতার সুনাম রয়েছে। আশা করি, এ ক্ষেত্রেও তা বজায় থাকবে।

Post a Comment

0 Comments