ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন এবং কীভাবে করা হয় ? Naming of cyclones

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম একটি দুর্যোগ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। আমাদের দেশে যখন কোন ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তখন তার একটি নাম থাকে। কিন্তু কেন এইসব ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় আর কিভাবে নামকরণ করা হয় তা নিয়ে থাকছে আজকের এই আলোচনা। 

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন এবং কীভাবে করা হয়

যদি কোনো ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ প্রতি ঘন্টা ৩৪ নটিক্যাল মাইলের বেশি হয় তবে আবহাওয়া অধিদফতর কর্তৃপক্ষ সেই ঝড়ের একটি নাম দিয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম আগে থেকেই বাছাই করা থাকে এবং যারা নামকরণ করেন তারা হলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা/ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (ডব্লিউএমও/ইএসসিএপি) প্যানেল অন ট্রপিকাল সাইক্লোনেস (পিটিসি) এর সদস্য দেশসমূহ। ট্রপিকাল সাইক্লোনেস এর প্যানেলটিতে বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডে সমেত ১৩টি দেশ রয়েছে। ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিকাল ওয়েদার অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ২০০০ সালে এই সদস্য দেশগুলি ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নাম প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে। সেই থেকে প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়কে আবর্তিত ভিত্তিতে তালিকা অনুসারে একটি নাম দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে (২০০৮) সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং ইয়েমেন এই দেশগুলোকে সদস্যপদ দেওয়া হয়। এই সদস্য দেশগুলো নতুন একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল, যাতে ঘূর্ণিঝড়ের মোট ১৯৯ টি নাম রয়েছে, ১৩টি দেশের প্রতিটি পরামর্শের সংকলন রয়েছে।



২০০৪ সালে বাংলাদেশের দেওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণটি ছিল ‘অনিল’। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতে আঘাত করেছিল। বাংলাদেশে আঘাত হানা নামকরণ হওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ‘সিডর’, এটি ছিল ওমানের দেয়া নাম।

ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় ভাবে কোনো রকম বিতর্ক বা ক্ষোভ সৃষ্টি করতে না পারে। 

কেন ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় ?

এক সময় ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো। এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।

সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলা আলাদা আলাদা পর্যায়ের হয়ে থাকে, পূর্বের কোন ঘূর্ণিঝড়ের নামের সাথে বর্তমান বা ভবিষ্যতে সৃ্ষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নামের সাথে মিল থাকবে না। যদি কখনো কোনো অঞ্চলে একসাথে একই সময়ে দু’টি ঘূর্ণিঝড় একসাথে উঠে তখন তাকে সহজেই শনাক্ত করা যায় তার ভিন্ন নামের সাহায্যে। নামকরণ ভবিষ্যতের রেফারেন্সেও সহায়তা করে যখন কোনো অতীত ঘূর্ণিঝড়ের উল্লেখ করা বা আলোচনার প্রয়োজন হয়। 


সচেতন হওয়া :

ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। অতীতে এ দেশটি এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেকবার শিকার হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কোন প্রকার হাত নেই। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতিও হয়তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তবে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আগাম প্রস্তুতি নিতে পারলে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে যেসকল মানুষ বসবাস করে, তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রে যেসকল জেলে মাছ ধরতে যান, তাঁদের জন্য সতর্কতা ও নিরাপদে ফিরে আসার জন্য আগাম ঘোষণা, বন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষার যথাযথ উদ্যোগ নিলে জান ও মাল, দুই ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ ছাড়া এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর চিকিৎসা সেবা বা খাদ্য ও পানীয় জোগান দেওয়া সহ যেসব জরুরি করণীয় থাকে, সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ধার অভিযান ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা সম্ভব। দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দক্ষতার সুনাম রয়েছে। আশা করি, এ ক্ষেত্রেও তা বজায় থাকবে।

Post a Comment

0 Comments