ট্রেড লাইসেন্স কি, ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়মসমূহ - Trade license

ট্রেড লাইসেন্স হলো একটি অনুমতি বা অনুমোদন যা একটি ব্যবসায়িক কারখানা, প্রতিষ্ঠান বা পেশাদারের কাছে প্রদান করা হয় যাতে তারা নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা বিক্রয় করতে পারেন। Trade অর্থ ব্যবসা এবং License অর্থ অনুমতি। অর্থাৎ, ব্যবসা করার জন্য যে অনুমতি, পত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাকে Trade License বলা হয়।

ট্রেড লাইসেন্স কি, ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়মসমূহ

সাধারণত আমরা জানি ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজন হয়। তো এখন কথা হচ্ছে কেন ব্যবসার জন্যে এই ট্রেড লাইসেন্স এর দরকার হয়, তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

১) বিক্রয় ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম : ট্রেড লাইসেন্স দ্বারা একটি ব্যবসা অথবা কারখানা নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা বিক্রয় করতে পারে। এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মার্কেটিং কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ এবং গুণমানের প্রমাণ দেয়।

২) উদ্যোগ ও উৎপাদন : কোনো উদ্যোগ বা উৎপাদন শুরু করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে। এটি প্রক্রিয়াগত নিয়মাবলী, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের মান নিয়ন্ত্রণে মানব সম্পদ এবং পরিবেশ সম্পর্কিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

৩) সেবা সরবরাহ : ট্রেড লাইসেন্স দ্বারা একটি প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে পারে যে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণে সেবা সরবরাহ করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ : হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠান সেবা সরবরাহ করতে হবে, যেমন : খাবার, বিভিন্ন যানবাহন সরবরাহ, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।



৪) নিবন্ধন এবং নিয়ম পরিচালনা : ট্রেড লাইসেন্স একটি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন এবং নিরাপত্তা মেনে চলতে উৎসাহিত করে। সরকার একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পার্যবেক্ষণ এবং নিয়ম পরিচালনা নিশ্চিত করতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে।

ব্যবসায় অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করতে যা লাগবে :

এক মালিকানা ব্যবসার ক্ষেত্রে :
  • দোকান /অফিস ভাড়ার সত্যায়িত চুক্তিপত্রের ফটোকপি
  • নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি
  • আবেদনকারির ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের কপি

যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে :
  • দোকান /অফিস ভাড়ার সত্যায়িত চুক্তিপত্রের ফটোকপি
  • নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি
  • ডিরেক্টরদের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের কপি
  • ২০০০ টাকা জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পার্টনাশিপের অঙ্গিকারনামা/ শর্তাবলি জমা দিতে হবে



কোম্পানির ক্ষেত্রে :
  • অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
  • কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইন-কর্পোরেশন
  • কোম্পানির মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন
  • ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তিন কপি ছবি
  • ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্র

ফ্যাক্টরি/ কারখানার ক্ষেত্রে :
  • পরিবেশের ছাড়পত্রের কপি
  • প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/ কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান বা স্থাপনার বিবরণসহ নকশা/ লোকেশন ম্যাপ
  • প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/ কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান বা স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিনামা
  • ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র
  • ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর নিয়ম কানুন মেনে চলার স্বাক্ষরিত অঙ্গিকারনামা ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প

ট্রেড লাইসেন্স করার জন্যে বেশ কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে, তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়মসমূহ :

১) প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা রেজিস্টার করা : প্রথমেই, আপনাকে আপনার ব্যবসা রেজিস্টার করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে। এটি সাধারণত আপনার প্রতিষ্ঠানের আইডি নম্বর বা ব্যবসায়িক নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে করা হয়।



২) প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা : আপনার প্রতিষ্ঠান এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের কিছু নথিপত্র প্রয়োজন হতে পারে, যেমন : নিবন্ধন সনদ, আইডি প্রমাণপত্র, ব্যবসা লাইসেন্স, কর রেজিস্ট্রেশন সনদ, ওয়ার্কার্স' কমপ্লায়েন্স কার্ড ইত্যাদি। আপনার অঞ্চলের নিয়াম এবং শর্তাবলী পরিদর্শন করুন এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যাচাই করুন যথাযথভাবে সংগ্রহ করার জন্য।

৩) আবেদনপত্র প্রস্তুত করা : স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানে যান এবং ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় আবেদন ফরম সম্পূর্ণ করুন। আবেদন ফরমে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিবরণ, কার্যক্রম, পণ্য বা পরিষেবা, বিপণন এলাকা, শর্তাদি পরিপালন এবং আপনার সম্প্রদায়ের প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করতে হবে।

৪) আবেদন জমা দিন এবং ফি পরিশোধ করা : আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করার পর, আপনাকে আবেদন জমা দিতে হবে যথাযথ অফিসে। আপনাকে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হতে পারে, যা স্থানীয় প্রশাসনিক অফিস বা ব্যাংকে জমা দিতে পারেন।

৫) নিবন্ধন এবং মনোনয়ন : আপনার আবেদন প্রক্রিয়ার পর সম্পর্কিত নিয়াম ও শর্তাবলী অনুসারে, আপনি একটি ট্রেড লাইসেন্স পাবেন। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজন হয় এবং প্রতি বছর নবায়নের প্রয়োজন হতে পারে।



এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ধরন এবং অঞ্চলের নিয়মাবলী উপর নির্ভর করে ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। আপনার অঞ্চলে ব্যবসায় করার জন্যে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য বিশেষ নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে যদি কোন কিছু না বুঝেন তাহলে স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে যোগাযোগ করুন ওনারা আপনাকে সমস্ত বিষয়াদি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

-------------------------------------

আজকে এই পর্যন্ত। দেখা হবে পরবর্তীতে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন। যদি আমাদের সাইটের পোস্টগুলো আপনার একটু হলেও উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এই রকম নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথে থাকুন। 

[ যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে ] 

Post a Comment

0 Comments