কন্টেন্ট রাইটিং কি। কন্টেন্ট রাইটিং শিখার উপায়

কন্টেন্ট রাইটিং কি, কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে কিভাবে আপনি ঘরে বসে আয় করবেন তা নিয়ে থাকছে আজকের এই আলোচনা। মূলত কন্টেন্ট রাইটিং হলো কোন বিষয়কে লেখার মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা। এটা হতে পারে অনলাইনে কিংবা অফলাইনে। কন্টেন্ট রাইটিং অনেকের কাছে আবার আর্টিকেল রাইটিং নামেও সুপরিচিত। শব্দ দুটি পরিচিত হলেও তাদের কাজ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই সঠিক ভাবে জানে না। আপনি যদি নতুন ভাবে কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যে। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কন্টেন্ট রাইটিং কি - Content writing করার উপায়।

কন্টেন্ট রাইটিং, এখানে দু’টি শব্দ রয়েছে। প্রথমটি হলো কন্টেন্ট ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে রাইটিং। রাইটিং শব্দটির সাথে সবাই আমরা পরিচিত। যার অর্থ লেখালেখি করা। নিজের মেধা ও অভিজ্ঞতা থেকে কোন কিছুর বর্ণনা লেখাতে রূপদান করাকে বলা হয় রাইটিং। অন্যটি হচ্ছে কন্টেন্ট, যেখানে নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ব্যবহার করে কোন কিছু লেখা, ছবি তোলা, ভিডিও করা ও তাতে নিজের কন্ঠের মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসকে বলা হয় কন্টেন্ট। সাধারণত কন্টেন্ট বলতে আমরা ৪টি বিষয়কে বুঝি, তা হলো :

Audio content : শুধুমাত্র ভয়েস এর মাধ্যমে তৈরি বা রেকর্ড করা কনটেন্টগুলাকে বলা হয় অডিও কন্টেন্ট। যেমন : Podcast, FM Radio ইত্যাদি।

Video content : ভিডিওর মাধ্যমে তৈরি করা কনটেন্টগুলোকে বলা হয় ভিডিও কন্টেন্ট। যেমন : YouTube Video, Natok, Web series, Movies, Cartoon ইত্যাদি।

Text content : যেই কনটেন্টগুলোকে লেখনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় সেগুলা হচ্ছে টেক্সট কনটেন্ট। যেমন : Article, Books, Blogging, Story ইত্যাদি।

Image content : ছবি এডিটিং করে তৈরি করা বিষয়বস্তুগুলোকে বলা হয় ইমেজ কনটেন্ট। যেমন : Logo, Templates, Graphics, Thumbnail ইত্যাদি।


কন্টেন্ট রাইটিং কি - What is Content Writing ?

উপরোক্ত তথ্যের আলোকে আমরা বুঝতে পারি, কন্টেন্ট রাইটিং হলো, কোন বিষয়বস্তুকে লেখনের মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা। তবে মনে রাখবেন, শুধু লিখলে কিন্তু হবে না, সেই লেখা অবশ্যই অর্থপূর্ণ ও মানসম্মত হতে হবে। লেখাটি কেন তৈরী করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য কি, কেন মানুষ আপনার লেখাটি পড়বে সেটার সঠিক বার্তা থাকতে হবে। 

কন্টেন্ট রাইটার কাকে বলে - What is a content writer ?

যে বা যারা নিজের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, কৌশল, দক্ষতা ইত্যাদি প্রয়োগ করে নিজের মতো করে কোন কিছু লিখে থাকে বা কন্টেন্ট তৈরী করে থাকে, সেই ব্যক্তিদের বলা হয় কন্টেন্ট রাইটার। উদাহরণ স্বরূপে, আমি আমার ব্লগসাইট “Toki Unlimited” এর জন্যে বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল লিখে থাকি। যেহেতু, আমি আর্টিকেলগুলা লেখনের মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করছি, তাই আমি একজন কন্টেন্ট রাইটার।

কন্টেন্ট রাইটার হতে হলে যা প্রয়োজন :

শিক্ষাগত যোগ্যতা : কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এখানে লেখালেখি করতে হয়, তাই লেখার মান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন বয়সে লেখালেখি করতে পারেন সমস্যা নাই তবে আপনি যদি একজন পেশাদার রাইটার হতে চান তাহলে নূন্যতম মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে হবে। আপনি যত বেশি শিক্ষা অর্জন করবেন শব্দ চয়নে ততো বেশি এক্সপার্ট হতে পারবেন, সাথে লেখাও হবে মানসম্মত।

কম্পিউটার টাইপিং : অনলাইনে কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার টাইপিং জানতে হবে। যদি আপনি ভালো ভাবে টাইপিং করতে না জানেন তাহলে কখনো অনলাইনে কন্টেন্ট রাইটার হতে পারবেন না। আর এখন বর্তমানে অফলাইন থেকে অনলাইনে বেশি কন্টেন্ট রাইটিং হয়ে থাকে। যেহেতু আমরা বাংলা ভাষাভাষী লোক তাই আমাদের বেশিরভাগ কন্টেন্ট বাংলায় লিখতে হয়। যদি আপনি কম্পিউটারে বাংলা লেখা বিজয় বায়ান্নোর মাধ্যমে শিখতে চান তাহরে এখনি ফ্রিতে ডাউনলোড করে নিন, বিজয় বায়ান্নো শিখি ছোট্ট বইটি।


লেখার নিয়ম : শুধু লিখলে তো হবে না, তার জন্যে প্রয়োজন আমাদের লেখা কন্টেন্টগুলা সঠিক নিয়মে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা। মূলত কন্টেন্ট লেখার নিয়ম কন্টেন্ট টাইপের উপর নির্ভর করে। একটি সুন্দর ও আকর্ষনীয় কন্টেন্ট লেখার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো।
  • বিষয়বস্তু নির্ধারণ
  • হেডলাইন ব্যবহার করা
  • অডিয়েন্স কী চায়, তা ফলো করা
  • লেখার আগে ভালোভাবে রিসার্চ করা
  • আর্টিকেলের শুরুর দিক আকর্ষণীয় করে তুলা
  • প্যারাগ্রাফগুলা বড় না
  • লেখা নিয়মিত আপডেট করা (কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করা)

কন্টেন্ট রাইটিং শিখার উপায় :

মনে রাখবেন, মানুষ এমনি এমনি কিছু করতে পারে না, তাকে প্রথমে শিখতে হয়। কন্টেন্ট রাইটিংও এমন একটি ধাপ, তা আপনাকে শিখে নিতে হবে। তার জন্যে প্রয়োজন বেশি বেশি করে অন্যের লেখা পড়া, তারা আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছে তা অনুধাবন করা। William Arthur Ward বলেছেন - Before you speak, listen. Before you write....... একটু ভালোভাবে নজর দিলে দেখতে পাবেন, এই একটি বাক্যে লেখক হওয়ার উপায় বলে দেওয়া হয়েছে। তাই দিনশেষে একটাই কথা, বেশি বেশি পড়ুন, যদি কাউকে কিছু জানাতে চান, তাহলে আগে নিজে জানার চেষ্টা করুন।

কন্টেন্ট রাইটিং করার মাধ্যম :

বেশ কয়েকটি উপায়ে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারবেন। তা নির্ভর করে সম্পূর্ণ আপনার উপর। নিচে কন্টেন্ট রাইটিং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়সমূহ তুলে ধরা হলো। যেমন :

Blogging/ব্লগিং : ব্লগিং এমন একটি স্থান যেখানে পাঠকদের জন্যে কোন বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আর্টিকেল লেখা ও পাবলিশ করা হয়ে থাকে। যে লেখাগুলা অনেক তথ্যবহুল ও লং/বড় বা শর্ট/ছোট দু‘ধরণের হয়ে থাকে। উদাহরণ : আপনি যে এখন লেখাটি পড়ছেন তাই হচ্ছে টুকি আনলিমিটেড ব্লগিং সাইটের একটি লেখা/কন্টেন্ট। আপনিও যদি একজন ব্লগার হতে চান ও ব্লগে লেখালেখি করতে চান কিন্তু ব্লগিং এর কিছু না জেনে থাকেন তাহলে এসো ব্লগিং শিখি বইটি এখনি ফ্রিতে ডাউনলোড করে নিন। 

News Writing : এক্ষেত্রে নিউজ/সংবাদপত্রের সাথে জড়িত খবরা-খবরগুলো লেখা হয়। দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলী সাংবাদিকরা তাদের লেখার মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অফলাইন নিউজ পেপারে তুলে ধরে।

Social media/সামাজিক মাধ্যম : একটি কোম্পানি তাদের যেকোন পণ্য প্রচার ও বিক্রয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায নিজস্ব বা অন্যান্য বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজে ছোট ছোট  মজার এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট প্রকাশ করে থাকে।

ট্রান্সলেশন : এধরণের কন্টেন্ট এর চাহিদাও কমবেশি রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা কিনা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে লেখাকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করে থাকে। 

Expert writing : নিজস্ব জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে যারা নিজের ও অপরের জন্যে সৃজনশীলতার সহিত লেখালেখি করে থাকে তাই হচ্ছে এক্সপার্ট রাইটিং। মূলত প্রফেশনাল যেকোন কাজে এধরনের রাইটিং ব্যবস্থা দেখা যায়।

Creative writing : যেসব লেখাতে রাইটার নিজের ক্রিয়েটিভিটির প্রকাশ করে থাকে সেই ধরণের রাইটিংগুলা হচ্ছে ক্রিয়েটিভ রাইটিং। যেমন : কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কৌতুক।



Copy writing : কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এই ধরণের কন্টেন্ট লেখা হয়ে থাকে। এখানে যেই পন্যের বিষয়ে লেখা হয় সেটাকে কপি বা সেলস কপি বলা হয়। এই আর্টিকেল লেখার উদ্দেশ্য হলো, ব্র্যান্ডের গুণাগুন ও সচেতনতা বাড়ানো, যাতে করে জনসাধারণ সেই প্রোডাক্ট কেনার আগ্রহ দেখায়।

এগুলা ছাড়াও আরো বেশ কয়েক টাইপের কন্টেন্ট রাইটিং রয়েছে। যেগুলার মাধ্যমেও একজন কন্টেন্ট রাইটিং অনায়াসে ঘরে বসে আয় করার সুযোগ রাখে। 

কন্টেন্ট রাইটিং জব খোঁজার উপায় :

যদি আপনি কন্টেন্ট রাইটিং এ দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে অনেকগুলা উপায় অবলম্বন করে কন্টেন্ট রাইটিং জব খুঁজতে পারেন। নিচে কন্টেন্ট রাইটিং জব খোঁজার উপায় তুলে ধরা হলো :

সোশ্যাল মিডিয়া/ফেসুবক : বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে ফেসবুক। যেখানে আপনি আপনার দক্ষতা প্রকাশ করতে পারেন, সাথে আপনি যে একজন কন্টেন্ট রাইটার ও আপনি কন্টেন্ট লিখতে আগ্রহী তা ফেসবুক গ্রুপগুলাতে পোস্ট করুন। এছাড়াও বর্তমানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কন্টেন্ট রাইটারদের ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে, যেখানে ক্লায়েন্ট নিজে তার কাজের ডিটেইলস লিখে পোস্ট দিয়ে লেখক হায়ার করেন। সেখানে চাইলে কাজ করতে পারেন, যদি ভাগ্য সহায় হয়। তাই চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

সংবাদপত্র/পত্রিকা : বিভিন্ন পত্রিকাগুলাতে খবরের পাশাপাশি চাকরির সংবাদও প্রকাশ হয়ে থাকে, যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের জন্যে পার্ট-টাইম কিংবা ফুল টাইম জব করার জন্য সার্কুলার দিয়ে থাকে, যাদের মূল লক্ষ্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হায়ার করা। তাই পত্রিকাগুলাতে চোখ রাখুন। বিশেষ করে চাকরির সংবাদপত্রগুলাতে

ব্লগ : এমন অনেক ব্লগ বা ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে লেখালেখি করে ঘরে বসে সহজে আয় করা যায়। তাই এই ধরণের ব্লগ সাইট খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

কন্টেন্ট রাইটিং এর ভবিষ্যত :

প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে, বিভিন্ন ব্লগ সাইট গড়ে উঠছে, যাদের কিনা কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য রাইটারের প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আসায় বিজ্ঞাপনের কাজ যেমন বাড়ছে, একইভাবে বিজ্ঞাপন সংস্থাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকা যেখানে শুধু হার্ড কপি ছিল, সেটাও অনলাইনে এসে গেছে এবং ক্রমশ এর পরিমাণ বেড়েই চলছে। বর্তমান সময়ে যেকোনো মিডিয়া, যেকোনো কোম্পানী ও কাজে কন্টেন্ট এর বিকল্প নেই। সুতরাং, কন্টেন্ট এবং কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদা যে সামনে আরো বৃদ্ধি পাবে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাই এটা স্পষ্ট যে আপনি যদি একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তাহলে আর পিছে ফিরে তাকাতে হবে না।


আশা করি কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে কিছুটা হলেও বুঝাতে পেরেছি। তাই ঘরে বেকার না বসে থেকে ব্লগিং প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। পরিচিত কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থাকলে তাদের পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। ফেসবুককে সময় কাটানোর মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার না করে, টাকা আয়ের উৎস বানিয়ে নিন। যদি আর্টিকেলটি আপনার একটু হলেও উপকারে এসে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে সাথে থাকুন।

Post a Comment

0 Comments