অধিকাংশ ব্লগার সাইটে ভিজিটর একবার আসার পর আর পুনরায় আসতে চায় না। যার জন্যে অনেক ব্লগাররা সাময়িক সময়ের জন্যে অধিক ভিজিটর পেলেও পরবর্তী সময়ে আর তেমন ভিজিটর পায় না, কারণ একটায় উক্ত ব্লগিং সিস্টেমটি ভিজিটর ধরে রাখতে পারে না। মূলত ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা বলতে দু’টি জিনিকে বুঝায়। প্রথম’ত, ওয়েবসাইটে তাদের সময় বৃদ্ধি করা অর্থাৎ তারা যেন ১-২ মিনিট বা এর অধিক সময় পর্যন্ত সাইটে থাকে সে ব্যবস্থা করা এবং দ্বিতীয়ত, ম্যাক্সিমাম ভিজিটরকে বারবার ফেরত আনার কৌশল অবলম্বন করা।
একটি ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা খুব একটা সহজ বিষয় নয়। তবে আমরা যদি কিছু কৌশল অবলম্বন করে ব্লগিং সাইট পরিচালনা করি তাহলে আমাদের জন্যে ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখা খুব একটা কঠিন ব্যাপারও না। তো আজকের এই আর্টিকেলে আমি ব্লগে ভিজিটর ধরে রাখার উপায় নিয়ে আলোচনার করার চেষ্টা করব। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১) কোয়ালিটি সম্পন্ন আর্টিকেল লেখা :
যেকোন ব্লগিং ওয়েবসাইটে ভিজিটর বৃদ্ধি করা অথবা ট্রাফিক ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের কোয়ালিটি সম্পন্ন আর্টিকেল নিয়মিত পাবলিশ করতে হবে। কোন আর্টিকেল লিখার পূর্বে চিন্তাভাবনা করতে হবে আমি যে এই আর্টিকেলটি লিখব আধো কি পাবলিক এই আর্টিকেল পড়বে, আর কেন’ই বা পড়বে এসব বিবেচনা করে যদি মনে হয়, পাবলিক অবশ্যই এই আর্টিকেল পড়বে ও তারা তাতে উপকৃত হবে বলে মনে করেন তাহলে লিখুন। মনে রাখবেন ‘দুষ্ট গরুর থাকার চেয়ে, গোয়াল শূন্য থাকা ভালো’, সাইটে হাজার হাজার আজেবাজে পোস্ট না লিখে প্রয়োজনীয় পোস্ট লিখুন, যাতে মানুষ উপকৃত হয়, তাতে করে একজন ভিজিটর যেমন সাইটে লম্বা সময় থাকবে তেমনি সে পুনরায় সাইটে প্রবেশও করবে।
২) মন্তব্যের করার সুবিধা প্রদান :
আর্টিকেল পাবলিশ করার পর, উক্ত আর্টিকেল ও আপনার লেখার মান কেমন তা একমাত্র সাইটে আসা ভিজিটর’ই ভালো বলতে পারবে, এছাড়াও তারা আপনার কাছে কি চাচ্ছে তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করুন। আর তার জন্যে প্রয়োজন, আর্টিকেল শেষে যেন যেকোন ভিজিটর স্বাধীন ভাবে মন্তব্য করতে পারে। সর্বদা ভিজিটরদের করা মন্তব্যের জবাব দিন। তাহলে তারা মন্তব্য করতে উৎসহ পাবে।
৩) ব্লগিং ওয়েবসাইট ডিজাইন :
ব্লগিং ওয়েবসাইটে ভিজিটর ধরে রাখার জন্যে ব্লগিং ওয়েবসাইট সুন্দর ভাবে ডিজাইন করুন। এমন ভাবে ডিজাইন করুন, যাতে একজন ভিজিটর কম্পিউটার, মোবাইল বা যেকোন ডিভাইস দিয়ে সহজে প্রবেশ করে আপনার আর্টিকেল পড়তে পারে। সাইটে আর্টিকেল এমন ভাবে সাজিয়ে রাখুন যাতে একজন ভিজিটর প্রথমবার এসে খুজে পেতে পারে। সাইটে অপ্রয়োজনীয় কিছু রাখবেন না, তাতে করে ভিজিটরটা বিরক্ত হয় এবং চলে যায়। ব্লগিং ওয়েবসাইটের জন্যে আপনি অনেক থিম পেয়ে যাবেন, কিন্তু অধিকাংশ থিমগুলা কম্পিউটারে মানসম্মত হলেও মোবাইল ডিভাইসে অনেকটা বাজে দেখায়, তাই থিম বাছাইয়ে গুরুত্ব দিন। ব্লগার সাইটের জন্যে সেরা প্রিমিয়াম থ্রিম এখনি ডাউনলোড করে নিন।
৪) ব্লগের জন্যে অনলাইন গ্রুপ তৈরি করুন:
ব্লগিং ওয়েবসাইটে অধিক পরিমাণে ভিজিটর পেতে ও ভিজিটর ধরে রাখতে আপনি আপনার ব্লগ রিলেটেড অনলাইনে বিভিন্ন জায়গায় গ্রুপ তৈরী করুন। যেমন : ফেসবুক, কোরা, লিঙ্কডইন ইত্যাদি। এসব জায়গায় আপনার সাইটের পোস্ট শেয়ার করুন সাথে লিংক যুক্ত করে দিন। তবে মনে রাখবেন, সর্বদা এসব গ্রুপে ট্রেন্ডিং টপিক ও মানুষের উপকারে আসে এমনসব পোস্ট শেয়ার করুন। তাতে সাইটে আসা ভিজিটর লম্বা সময় ধরে পোস্ট পড়বে, আর যদি ভিজিটর পাবার আশায় হাবিজাবি শেয়ার করে, ভিজিটর নিয়ে আসেন তাহলে উক্ত সব ভিজিটর আসা মাত্র চলে যাবে। তাতে করে আপনার সাইটের বাউন্স রেট অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
৫) ইন্টারনাল লিংক তৈরী করা :
যেকোন নতুন পোস্টের লেখার মাঝে যখন আমরা আমাদের সাইটের অন্যান্য পোস্টগুলার লিংক যুক্ত করে দেই, সেটায় হচ্ছে মূলত ইন্টারনাল লিংক। তাতে করে উক্ত পোস্ট পড়তে আসা ভিজিটরের যদি মনে হয় সেই পোস্টটাও তার পড়া প্রয়োজন তাহলে সে সহজে ইন্টারনাল লিংকে ক্লিক করে পড়তে পারবে, তাতে ব্লগের পেজ ভিউ বাড়বে। অবশ্যই মনে রাখবেন পোস্টের মাঝে রিলেটেড পোস্টের লিংক যুক্ত করবেন।
৬) সহজ-সরল কন্টেন্ট তৈরি করুন :
আর্টিকেল লিখার সময় খুব একটা কঠিন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করবেন না। যদি পাঠক আপনার লেখা বুঝতে না পারে তাহলে সে আপনার লেখা পড়বে না, এটাই স্বাভাবিক। তাই সহজে বুজতে পারে এমনসব শব্দ ব্যবহার করুন। এছাড়াও আপনার আর্টিকেল যেন বুজতে পারে তার জন্যে লেখার মধ্যে ছবি যুক্ত করুন (যদি প্রয়োজন মনে করেন)। গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলা বোল্ড ও লাল বা নীল রঙ দ্বারা চিহ্নিত করে রাখুন।
৭) সাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্বি করা :
যদি ওয়েবসাইট স্লো হয়, তাহলে যেকোন ভিজিটর ওয়েবসাইট লোডিং নেওয়ার আগে’ই চলে যাবে। মনে রাখবেন, একই টপিকে শত শত আর্টিকেল গুগলে আছে, তাই কেউই আপনার আর্টিকেল লোড হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে না। তাই সাইটের স্পিড যেন কোন ভাবে না কমে তার জন্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করুন। বিশেষ করে সাইটে লেখার মাঝে ৮০-১০০ kb উপরে কোন ছবি যুক্ত করবেন না।
৮) পুশ নোটিফিকেশন চালু করা :
ব্লগিং ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে পুশ নোটিফিকেশন ভিজিটরস বৃদ্বিতে অনেকাংশে ভূমিকা রাখে। যেমন কোন ভিজিটর ওয়েবসাইট ত্যাগ করার পরেও কানেক্টেড থাকতে হেল্প করে, তাদেরকে পুণরায় ব্লগে ফেরত নিয়ে আসতে পারে এই পুশ নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে। পুশ নোটিফিকেশন ভিজিটরসকে তাদের মোবাইল এবং ডেস্কটপ ডিভাইসে সরাসরি নোটিফিকেশন পাঠায়, যা উপেক্ষা করা কঠিন। তাই স্যোশাল মিডিয়া এবং ইমেইলের চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে ভিজিটর এংগেজ করতে পারে। জনপ্রিয় পুশ নোটিফিকেশন টুলস এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো Onesignal
আশা করি বুজতে পারছে, উপরোক্ত সকল কৌশল অবলম্বন করে ব্লগিং ওয়েবসাইটে পরিচালনা করলে ইনশাআল্লাহ দেখবেন আপনার সাইটে যেমন ভিজিটর বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনি সাইটে ভিজিটরও ধরে রাখতে পারবেন। ব্লগিং সম্পর্কে যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে থাকুন।
0 Comments
Your comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.
Emoji