যৌতুক নামের অভিশাপে এই সমাজ,এই দেশ জর্জরিত। একজন পিতা তার আদরের কন্যা সন্তানকে ১৮-২০ বছর লালন পালন করে যখন অন্যের ঘরে তুলে দিতে যায় ঠিক তখনি একটা প্রশ্ন চারদিকে ঘুরপাক করে, আর তা হলো, মেয়ের বাবা ক্যাশ কত দিবে। ঘর সাজানোর জন্য কি কি দিতেছে আরও নানা কথা। হ্যাঁ এটাই সেই কুপ্রথা যৌতুকের কথা বলতেছি।
যাকে আমরা ছেলে পক্ষরা অট্টহাসি দিয়ে বলি আপনার মেয়ের সুখের জন্যই তো দিবেন,আমরা তো আর আমাদের জন্য বলি নাই। বিয়ের সময় নানা ইঙ্গিতে ঘুরে ফিরে একটাই কথা উঠে আসে আর সেটা হচ্ছে যৌতুক। যা একজন মেয়ের বাবা দিতে না পারলে কিংবা একটু ১৯/২০ কম হলে শশুর বাড়িতে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় বাবার আদরের রাজকন্যাকে। অশিক্ষিত মানুষগুলো নৈতিক শিক্ষার অভাবে যৌতুকের জন্য তাদের স্ত্রীদের উপর নির্যাতন করছে। কিন্তু শিক্ষিত মানুষগুলা যখন ভদ্রতার মুখোশ পড়ে যৌতুকের দাবী নিয়ে নিজের স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তখন তাদেরকে কি বলা যায় আমি ভাষা খুঁজে পাইনা। হয়তো জানোয়ার, নয়তো তারচেয়েও বেশি নিকৃষ্ট কিছু থাকলে সেটা বলে আখ্যায়িত করতাম।
আজ খবরের কাগজের পাতাগুলা উল্টালে ভেসে আসে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর উপর স্বামী ও স্বামীর পরিবারের চরম নির্যাতনের জলন্ত শিখা। কেউ কেউ এই জলন্ত শিখায় পুড়ে জীবনের মতো ছাই হয়ে যায় আবার কেউবা সেই জলন্ত শিখার তাপ সহ্য করে সামনে এগিয়ে যায়। প্রতিনিয়ত এই যৌতুকের বলি হচ্ছে আমার আপনার মা-বোনেরা। শুধুমাত্র তাতে থেমে নেই, মেয়ের সুখের জন্য আমাদের সমাজের বাবারা দিনরাত পরিশ্রম করেও যখন ব্যর্থ তখন নিজেদের থাকার শেষ সম্ভলটুকু পর্যন্ত বিক্রি করতে তারা বাধ্য থাকে। লক্ষ্য শুধুমাত্র একটাই "মেয়ের সুখ"।
এর শেষ কোথায়, আমরা কি আধো মানুষ হতে পারব না। মেয়ের বাবা থেকে মেয়েকে নিয়ে আসতেছি, যাকে আপনি উপভোগ করবেন, তার চেয়ে বড় সম্পদ তো টাকা-পয়সা হতে পারে না। যদি আপনার নিকট টাকা পয়সা আর সম্পদই বড় হয় তাহলে ওই টাকা আর সম্পদকে বিয়ে করেন,তাহলেই তো হয়। আজ সমাজের বেশিরভাগ পরিবারই যৌতুকের কুপ্রথায় আক্রান্ত। যার কারণে এইসব পরিবার আর সমাজে কোনপ্রকার শান্তি নেই। যারা বিয়ে করবেন, দয়া করে যৌতুকে না বলুন, যৌতুক ছাড়া একটি মেয়েকে নিজের ঘরে নিয়ে আসুন। যৌতুকের কারণে কখনো নারীর উপর নির্যাতন করবেন না। মনে রাখবেন আপনার ঘরেও বোন রয়েছে, আপনি যদি অন্যের মেয়েকে নির্যাতন করেন তাহলে আপনার বোন যে অন্যের ঘরে ওই নির্যাতনের শিকার হবে না, তার তো কোন গ্যারান্টি নাই।
যাদের বোন নাই, তারাও মনে রাখুন আপনি একজন নারীর গর্ভ থেকে এসেছেন, নারীর কষ্ট বুজতে শিখুন, একদিন ইনশাআল্লাহ আপনিও সেই কণ্যার বাবা হবেন। যে যৌতুকের জন্য আজ একজন মেয়ে ও মেয়ের বাবাকে নির্যাতন করতেছেন, ওই দিনটা বেশি দিন নেই, যেদিন আপনার সন্তানকে পরের ঘরে পাঠাবেন আর দেখবেন আপনি যা করেছেন আপনার স্ত্রী ও তার পরিবারের সাথে ঠিক সেই কাজটাই আপনার মেয়ের জামাই করছে। যৌতুক প্রথার চক্রটি এখানে থামিয়ে দিন, দিন শেষে যে মানুষটির কাছে নিজের আবেগ, দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করেন তাকে কিভাবে নির্যাতন করেন! সেও তো মানুষ, সেও তো আপনার মায়ের মতো একজন নারী, সেও তো আপনার বোনের মতো একটি মেয়ে, সেও তো একজন সন্তানের মা। তার চেয়েও বড় কথা উনি আপনার জীবনের একজন পরিপূরক। যাকে ছাড়া জীবন এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। তাই যৌতুককে না বলুন, যৌতুক মুক্ত সোনার বাংলা গড়ুন, যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতন বন্ধ করুন।
আরো পড়ুন : বিকাশে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার নিয়ম।
0 Comments
Your comment helps to inspire and motivate a blogger to write something better, so please don't forget to give your feedback after reading each post.
Emoji