রাউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলা জানা দরকার - Router কিনে ঠকবেন না।

ওয়াইফাই ব্যবহারের জন্যে আমরা একেকজন একেক মডেলের Router ব্যবহার করি। বর্তমান বিশ্ব ইন্টারনেটের সাথে অনেকাংশে জড়িত। তাই Internet সহজলভ্য করার জন্য Wifi এর সৃষ্টি। এই ওয়াইফাই ব্যবহার করতে হলে মধ্যবর্তী একটি ডিভাইসের প্রয়োজন আর তা হচ্ছে রাউটার। প্রথম অবস্থায় Router কোনটা কিনতে হবে, কোনটি কিনলে ভালো হবে এগুলা না ভেবে Wifi Company লোকদের কথামতো বা সোশ্যাল মিডিয়াতে চাকচিক্য বিজ্ঞাপন দেখে একটি কিনে ফেলি। কেনার পর হয়তো অনেকে দেখেন আপনার যেমন Service প্রয়োজন তা আপনার কেনা রাউটারটি দিতে পারছে না। তাই রাউটার কেনার আগে অবশ্যই কিছু বিষয় চিন্তা ভাবনা করে কেনা প্রয়োজন। এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে রাউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলা মাথায় রেখে কিনতে হবে সেগুলা নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

রাউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলা জানা দরকার। Router কিনে ঠকবেন না।

রাউটার কেনার সময়ে অবশ্যই আমাদের কিছু বিষয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। নাহলে Router কিনে ঠকতে পারেন। রাউটার এমন একটি মধ্যবর্তী Device যা আপনার অন্য ডিভাইসগুলাাকে ইন্টারনেটের সাথে Connect করে রাখে। এবং আপনাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে দেয়। এটি আপনার ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন রাউটার কেনা সহজ কাজ নয়, যদি আপনি কিছু বিষয় খেয়াল না করেন তবে আপনি ঠকে যেতে পারেন। অর্থাৎ আপনি যে প্রয়োজনে Router কিনে আনলেন, এনে দেখলেন ঐ রাউটার সেই কাজে আপনাকে সুবিধা দিচ্ছে না। তাই  ক্রয় করার আগে আপনাকে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যে বিষয়গুলা বিবেচনা করা উচিৎ সেই বিষয়গুলা নিচে আলোচনা করা হলো।



রাউটারের ধরণ :

বাজারে বিভিন্ন ধরনের Router পাওয়া যায়, এবং প্রত্যেকটি রাউটারের ভিন্ন ভিন্ন Feature রয়েছে। আপনি যে ধরণের রাউটার সিলেক্ট করবেন তা আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন ধরণের রাউটারের মধ্যে রয়েছে:

ক. তারযুক্ত রাউটার : এই ধরণের রাউটার একটি ইথারনেট কেবল ব্যবহার করে আপনার ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।

খ. ওয়্যারলেস রাউটার : একটি ওয়্যারলেস রাউটার একটি ওয়্যারলেস সিগন্যাল ব্যবহার করে আপনার ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এতে অতিরিক্ত ক্যাবল যোগ করে ডিভাইস কানেক্ট করার ঝামেলা নেই।

গ. ম্যাশ রাউটার : ম্যাশ রাউটারের সিস্টেম যা অনেক দূর পর্যন্ত কভারেজ পরিসর সরবরাহ করতে পারে এবং সকল ডিভাইসে একসাথে কাজ করে। ম্যাশ রাউটার বড় বাড়ি এবং বিল্ডিংয়ের জন্য উপযুক্ত, যেখানে একটি ফ্লোর থেকে আরেকটি ফ্লোরকে কানেক্ট করা যাবে। তাই রাউটার কেনার সময়ে এ বিষয়টি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।

ঘ. ডুয়েল-ব্যান্ড রাউটার : আগে উল্লিখিত হিসাবে, একটি ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটারের অনেক দূর পর্যন্ত কাভারেজের ক্ষমতা রয়েছে এবং রাউটার থেকে অনেক দূরে থাকা ডিভাইসে ভালো ইন্টারনেট স্পিড দিতে পারে।

ঙ. ট্রাই-ব্যান্ড রাউটার: একটি ট্রাই-ব্যান্ড রাউটার মূলত ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটারের একটি উন্নত সংস্করণ, যা দ্রুত ইন্টারনেট গতি সরবরাহ করে এবং অনেকগুলো ডিভাইসে একসাথে সমানভাবে কাভারেজ দিতে পারে।



ইন্টারনেট স্পিড :

Wifi ব্যবহার করার মূল্য দুটি উদ্দেশ্য হচ্চে দাম কম ও Speed বেশি। তাই আপনার Internet Service সরবরাহকারী থেকে প্রদত্ত ইন্টারনেট গতির সাথে আপনার নতুন রাউটার কেনার আগে রাইটারের Speed আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ উপভোগ করার জন্য রাউটারের গতি আপনার আইএসপির গতির সাথে মিল থাকতে হবে বা বেশী হতে হবে। আপনার যদি দ্রুত ইন্টারনেট গতি থাকে তবে আপনার একটি হাই-এন্ড রাউটারের প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে ধীর গতির Internet Connection থাকলে হাই স্পিড ক্যাপাসিটির দামি রাউটার কেনার দরকার নেই। যদি আপনি রাউটারের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসের সংখ্যাও বিবেচনা করেন তবে এটি আরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে সহযোগিতা করবে। আপনার যদি অনেকগুলি Device থাকে তবে তাদের সকল ডেটা ট্রান্সফারের জন্য উচ্চ গতির ক্ষমতাসহ একটি রাউটার কেনা আপনার জন্য অপরিহার্য।

রেঞ্জ বা সীমা :

একটি রাউটারের পরিসীমা বলতে ডিভাইস এবং রাউটারের মধ্যে সর্বাধিক দূরত্ব যাতে অনায়াসে সিগন্যাল Transfer করতে পারে। আপনার যদি বড় বাড়ি বা অফিস স্পেস থাকে তবে আপনার এমন একটি Router প্রয়োজন যা অনেক দূর পর্যন্ত কভার করতে পারবে। আপনার ডিভাইসগুলি কোনো বাধা বা দুর্বল সিগন্যাল ছাড়াই ইন্টারনেটের সাথে কতটা ভালোভাবে সংযোগ করতে পারে তা রাউটারের রেঞ্জ ঠিক করবে। দুই ধরণের রেঞ্জ রয়েছে, একক ব্যান্ড এবং ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার। একটি একক-ব্যান্ড রাউটারের একটি সীমিত রেঞ্জ থাকে এবং কেবলমাত্র রাউটারের কাছাকাছি ডিভাইসগুলিকে সাপোর্ট করতে পারে। অন্যদিকে একটি ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটারের আরও বিস্তৃত পরিসীমায় কাজ করতে পারে এবং রাউটার থেকে তুলনামূলক দূরে থাকা ডিভাইস সাপোর্ট করতে পারে।



কোয়ালিটি অফ সার্ভিস সাপোর্ট :

রাউটার কেনার সময় পরিষেবার গুণমান বিবেচনা করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিউওএস আপনাকে নির্দিষ্ট ধরণের ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং তাদের প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ যেন পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করে। এটি বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনার নেটওয়ার্কের সাথে একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত থাকে এবং ভিডিও স্ট্রিমিং বা অনলাইন গেমিংয়ের মতো বেশী ব্যান্ডউইথ-ব্যয় হয় এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করেন। কিউওএস এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে আরও বেশী ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ করে স্মুথভাবে চলছে তা নিশ্চিত করে। বাফারিং, ল্যাগ এবং অন্যান্য কানেকশনের সমস্যা কমাতে সহায়তা করতে পারে। রাউটার কেনার সময়, আপনার নেটওয়ার্কের ট্র্যাফিক পরিচালনা করতে এবং আপনার সামগ্রিক ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সহায়তা করার জন্য এটিতে কিউওএস কার্যকারিতা রয়েছে তা নিশ্চিত করুন।

দাম নির্ধারণ :

একটি নতুন রাউটার কেনার সময়ে মূল্য বিবেচনা করা একটি অপরিহার্য বিষয়। বাজারে বিভিন্ন ধরণের রাউটার পাওয়া যায় এবং তারা বিভিন্ন মূল্য ট্যাগ লাগানো অবস্থায় বাজারে আসে। রাউটার কিনতে বের হওয়ার আগে বাজেট মাথায় রাখলে সবচেয়ে ভালো হয়। একই মডেলের রাউটার একেক দোকানে একেক দামে দেখবেন। তাই আপনাকে মার্কেটে দাম যাচাই করা উচিৎ। আপনার বাজেট অনুযায়ী ভালো মানের যে রাউটারটি বাজারে পাওয়া যায় তা কেনার চেষ্টা করুন।

MU-MIMO সাপোর্ট :

মাল্টি-ইউজার মাল্টিপল ইনপুট মাল্টিপল আউটপুট (এমইউ-এমআইএমও) কোন রাউটার কেনার সময় বিবেচনা করার মতো আরেকটি ফিচার। এমইউ-এমআইএমও প্রযুক্তি একাধিক ডিভাইসকে একই সাথে একটি রাউটার থেকে ডেটা গ্রহণ করতে দেয়। এটি নেটওয়ার্কের সাথে একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত থাকলে ধীরগতির হয়ে যাওয়া এবং বাফারিং কমাতে সহায়তা করে। এমইউ-এমআইএমও একাধিক ইউজার সার্ভিসে বিশেষত দরকারী। যখন সবাই একই সময়ে ব্যান্ডউইথ-বেশী খরচ হয় এমন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তখন এটি ভালো সাপোর্ট দেয়। এমইউ-এমআইএমও প্রযুক্তি ল্যাগ এবং বাফারিং হ্রাস করে এবং আপনার নেটওয়ার্কের সমস্ত ডিভাইস স্মুথভাবে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করে আপনার সামগ্রিক ইন্টারনেট এক্সপিরিয়েন্সকে উন্নত করে।



নিরাপত্তা সিকিউরিটি ফিচার

ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।  যদি এটি নিরাপদ না হয় তবে আপনার রাউটারটি আপনার নেটওয়ার্কের পোর্টাল হতে পারে এবং আপনার নেটওয়ার্ক হ্যাক বা এক্সেস অন্যদের কাছে চুরি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। অতএব, একটি নতুন রাউটার কেনার আগে, আপনাকে এটির অফার করা নিরাপত্তা ফিচার দেখে বিবেচনা করতে হবে। রাউটারের কিছু প্রয়োজনীয় সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে :

ক. WPA2 এনক্রিপশন : এটি এক ধরণের এনক্রিপশন যা আপনার ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত করে। অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করতে এটি আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করে।

খ. ফায়ারওয়াল : ফায়ারওয়াল সাপোর্টেড একটি রাউটার আপনার নেটওয়ার্ককে অবাঞ্ছিত ট্র্যাফিক থেকে রক্ষা করতে পারে।

গ. গেস্ট নেটওয়ার্ক : এটি একটি পৃথক নেটওয়ার্ক যা আপনার অতিথিদের আপনার প্রাথমিক নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস না করেই ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে দেয়। এতে অথিতিদের সাথে মূল পাসওয়ার্ড শেয়ারের প্রয়োজন পরে না।

ঘ. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল : আপনার যদি সন্তান থাকে তবে তাদের পিতামাতা সন্তানদের নির্দিষ্ট সাইট বা অ্যাপ্লিকেশনে অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করতে পারে।

ব্র্যান্ড এবং রিভিউ :

আপনি যে রাউটারটি কিনতে চাচ্ছেন রাউটার কেনার আগে উক্ত ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিন। অন্যান্য ইউজাররা কী বলছেন তা দেখতে আপনি অনলাইন বিভিন্ন শপে রিভিউ দেখতে পারেন। ইউজার রিভিউ আপনাকে রাউটারের কর্মক্ষমতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং ব্যবহারের সহজতা সম্পর্কে ধারণা পেতে সহায়তা করতে পারে।

ব্যবহারের সহজতা :

অধিক দাম দিয়ে ভালো Router কিনলে’ই হবে না, এর ব্যবহারও কিন্তু জানতে হবে, তা নাহলে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই রাউটার কেনার আগে দেখে নিন এর ব্যবহার ও Settings সেট করা সহজ নাকি কঠিন। তুলনামূলক সহজে সেটিংস নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন রাউটার কিনুন।



বাজারে যে ব্র্যান্ডের Router বেশি পাওয়া যায় :

বাংলাদেশের বাজারে আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ও মডেলের রাউটার পেয়ে যাবে। জনপ্রিয় কিছু রাউটার ব্র্যান্ডের নাম নিচে দেওয়া হলো যা বাজারে যেকোন দোকানে আপনি পেয়ে যাবেন।

TP-Link : TP-Link হল একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড যা বিভিন্ন দামের পেয়ে যাবেন। নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষমতা এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস প্রদানের জন্য এই ব্র্যান্ডের রাউটার বেশ জনপ্রিয়।

D-Link : D-Link হল আরেকটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ড যা তাদের গুণমানের জন্য পরিচিত। এই ব্র্যান্ডের রাউটার বাড়ি এবং অফিস উভয় পরিবেশেই ব্যবহারের উপযোগী এবং বিভিন্নরকম মডেল আপনি এদের কাছ থেকে পেয়ে যাবেন।

Xiaomi : Xiaomi স্মার্টফোনের জন্য পরিচিত হলেও, কম্পিটেটিভ ফিচারসহ রাউটার অফার করে থাকে। এদের রাউটারগুলি প্রায়শই অন্যান্য Xiaomi ডিভাইসের সাথে ইন্টার কানেক্টেড থাকে যা থেকে আপনি বাড়তি বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে যাবেন।

ASUS : ASUS একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড যা উন্নত ফিচারসহ উচ্চ-মানের রাউটার তৈরি করে থাকে। এরা গেমিং, উচ্চ-গতির ইন্টারনেট এবং ব্যাপক কভারেজের জন্য উপযোগী রাউটার অফার করে। 

Huawei : হুয়াওয়ে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের রাউটার বাড়ি এবং অফিস উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এই ব্র্যান্ডের রাউটারে আপনি নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষমতা এবং নিরাপত্তা পেয়ে যাবেন।

আশা করি বুঝতে পারছেন, যদি আপনি একটি রাউটার কেনার চিন্তা করেন তাহলে উপরোক্ত কথাগুলা মেনে রাউটার কিনুন, আশা করি ঠকবেন না। এই রকম নিত্যনতুন টিপস ও ট্রিকস জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

আজকে এই পর্যন্ত। দেখা হবে পরবর্তীতে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন। যদি আমাদের সাইটের পোস্টগুলো আপনার একটু হলেও উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সাথে Share করতে ভুলবেন না। আর এই রকম নিত্যনতুন Article পেতে গুগল নিউজ ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন।  

Post a Comment

0 Comments